Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৪-৯-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:১৬
  • ৬৬ বার দেখা হয়েছে

গাইবান্ধায় অস্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে

গাইবান্ধায় অস্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে

আবু সায়েম►

গাইবান্ধা পৌরসভা এলাকায় নেই পর্যাপ্ত গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেট। যে কয়টি রয়েছে সেগুলোরও নাজুক অবস্থা। এতে শহরে বিভিন্ন কাজে এসে অবস্থান করা মানুষেরা পড়ছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের। সেইসঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ এবং দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ফলে তৈরি হচ্ছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি।

গাইবান্ধা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৭৮ হাজার। এছাড়াও জেলার ৭ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন শহরে। কিন্তু সকলের জন্য শহরের ৫টি জায়গায় রয়েেেছ ৫টি পাবলিক টয়লেট। কিন্তু সেগুলোরও নাজুক অবস্থা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পুরাতন জেলখানা মোড়, পৌরপার্ক, নতুন বাজার, হকার্স মার্কেট ও বাস টার্মিনাল এলাকায় রয়েছে পাবলিক টয়লেট। এসব গণশৌচাগারের মেঝেতে জমে আছে পানি ও কাদা, নোংরা হয়ে আছে কমোড, বেশিরভাগ টয়লেটরই দরজা ভাঙা, ভেঙে গেছে কয়েকটির ছাদ, খসে পড়ে আছে প্লাস্টার, নেই নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা, নেই স্যান্ডেল, টয়লেট টিস্যু ও হ্যান্ডওয়াশ এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা; রয়েছে অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ এবং সংস্কারের অভাবে উৎকট গন্ধ। এমন অবস্থার কারণে এসব পাবলিক টয়লেটে যেতে চান না অনেকে। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় শহরে পাবলিক টয়লেট না থাকায় পথচারীরা যত্রতত্র প্রস্রাব করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। অনেক জায়গায় নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। 

সাব্বির আহমেদ নামে পৌরসভার এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে বাসা থেকে বাইরে বের হতে হয়। কয়েক ঘণ্টা পরপর প্রত্যেকেরই প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে। শহরে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের বড়ই অভাব। যেগুলো আছে সেগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী। এর ফলে অনেকে ফুটপাতে, খোলা জায়গায় প্রস্রাব করছেন। দুর্গন্ধের কারণে সেসব পথ দিয়ে চলাচল অস্বস্তিকর। এ কারণে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গণশৌচাগারের একান্ত প্রয়োজন।

সদর উপজেলার কচুয়ার খামার গ্রাম থেকে ব্যক্তিগত কাজে শহরে আসা রেখা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসার আগেই প্রস্রাব-পায়খানার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। শহরে গেলে এই বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। পুরুষরা তবু যেখানে-সেখানে কিংবা মসজিদগুলোতে প্রস্রাব-পায়খানা করতে পারে। কিন্তু আমাদের নারীদের বিপাকে পড়তে হয়। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রাখতে হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ এবং দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব বা পায়খানা আটকে রাখার ফলে তৈরি হচ্ছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা বলেন, যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি মল-মূত্র আটকে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মল-মূত্র আটকে রাখলে এটি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় এবং এর ফলে মূত্রাশয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সংক্রমিত হয় মূত্রথলি, কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গ। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে টয়লেট ব্যবহারের ফলে কলেরা, ডায়রিয়া ও কৃমিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। 

এদিকে পৌরসভার পাবলিক টয়লেটগুলো সবার জন্য ব্যহারের উপযোগী করে সংস্কারের কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নাধীন ‘রাইজিং ফর রাইটস’ প্রকল্প। ইতোমধ্যে একটি গণশৌচাগারের সংস্কার কাজও শেষ করেছে সংস্থাটি। ‘রাইজিং ফর রাইটস’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী জেভিয়ার স্কু বলেন, “নগরব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন সেবায় সকল শ্রেণীর মানুষের প্রবেশগম্যতা যেন থাকে সেজন্য রাইজিং ফর রাইটস প্রকল্প এডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী সকলেই যেন স্যানিটেশন সুবিধা পায় সেজন্য আমরা করে যাচ্ছি। সম্প্রতি আমরা শহরের পুরাতন জেলাখানা মোড় এলাকার পাবলিক টয়লেটটি সংস্কার করেছি। সেখানে এখন সকল ধরনের মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে। আগামীতেও পৌরসভার সাথে আমরা যৌথভাবে কাজ করব।” 

স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ও গাইবান্ধা পৌরসভার প্রশাসক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট আসলেই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আমাদের গাইবান্ধা পৌরসভায় ৫টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। যা সংখ্যায় খুবই কম। এক্ষেত্রে বিশেষ করে নারীদের সমস্যা হচ্ছে বেশি। আমরা এগুলো সংস্কারের কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিয়াম স্কুলের পাশের পাবলিক টয়লেটটি সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকীগুলোর কাজও করা হবে। আর আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নতুন করে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad