• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৪-৬-২০২৪, সময়ঃ দুপুর ০১:২১

বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট পুরস্কার জিতলেন ‘ছবির কবি’ গাইবান্ধার কুদ্দুস আলম

বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট পুরস্কার জিতলেন ‘ছবির কবি’ গাইবান্ধার কুদ্দুস আলম

‘ছবির কবি’ গাইবান্ধার কুদ্দুস আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট-২০২৪’ বিজয়ী হয়েছেন ‘ছবির কবি’ হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধার কৃতি সন্তান জনপ্রিয় নিউজ ও ফটোএজেন্সি ফোকাস বাংলার আলোকচিত্রী সাংবাদিক কুদ্দুস আলমসহ আরও তিনজন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত আলোকচিত্রীদের ছবি নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

সোমবার (৩ জুন) রাতে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম অনলাইনে ঘোষণা করা হয়। কুদ্দুস আলম ছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য তিনজন হলেন এফআইএপির কাজী গোলাম কুদ্দুস, প্রথম আলোর সাজিদ হোসেন এবং দৈনিক বাংলার সৈয়দ মাহমুদুর রহমান।

এ ছাড়া আরও তিনজন আলোকচিত্রীকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সম্মানজনক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন নিউজ বাংলার পিয়াস বিশ্বাস, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নাঈম আলী ও দৈনিক ইত্তেফাকের আবদুল গনি।

গত বছরের বাছাই করা ছবিগুলো থেকে একটি ছবিকে ‘পিকচার অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কার পাওয়া ছবিটি তুলেছেন ফোকাস বাংলার কুদ্দুস আলম। 

গত এক বছরে আলোকচিত্র সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠ কাজগুলো নির্ধারণের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় পেশাদার আলোকচিত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকেরা এ প্রতিযোগিতায় সম্পৃক্ত ছিলেন।

‘জীবন পুড়ে কয়লা!’ শিরোনামে গাইবান্ধার এবিসি ইটভাটা থেকে তোলা পুরস্কার পাওয়া ছবিটির ক্যাপশনে কুদ্দুস আলম লেখেন- ‘গাইবান্ধায় ইটভাটার কয়লা ভাঙার নারী শ্রমিক তারা। কয়লার ধুলোয় মলিন তাদের জীবন, জীবন পুড়ে কয়লা হওয়ার পথে তারা। তবুও তারা বেঁচে থাকার তাগিদেই বেছে নিয়েছে এই রূক্ষ রূঢ় বাস্তব জীবন। বছরের ছয় মাসই তারা ইটের ভাটায় ধূসরিত মলিন জীবনযাপন করেন। জমিলা বেগম, বুলবুলি বেগম ও সুনেত্রা রাণী কাজ করেন এবিসি ইটভাটায়। তারা দৈনিক ৪শ’ টাকা হারে পারিশ্রমিক পান। সেই টাকা দিয়েই চলে জীবন ও আনন্দ।’ 

প্রতিযোগিতার আয়োজক দৃক গ্যালারির জানিয়েছে, ভুয়া খবরের এই যুগেও গণমাধ্যমে মুদ্রিত আলোকচিত্র খবরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উৎস হিসেবে বেঁচে আছে। একই সাথে প্রেস আলোকচিত্রীর পেশা পরিণত হয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী আলোকচিত্রীরা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত  হয়েছেন। কিন্তু তাদের যৌথ প্রতিভার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কিংবা জাতির প্রতি তাদের অবদানের বিশেষ কোনো মূল্যায়ন আজ পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশ প্রেস ফটো এ্যাওয়ার্ড সেই সকল সাহসী নারী ও পুরুষের কীর্তিগাঁথাকে উদপযাপন করে যারা সম্মুখসারির যোদ্ধা হয়ে প্রতিদিন সংবাদ সংগ্রহ করেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় পেশাদার আলোকচিত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী দ্বারা গত এক বছরে আলোকচিত্র সাংবাদিকতা এবং তথ্যমূলক আলোকচিত্রের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কাজগুলো নির্ধারণের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি আলোকচিত্রীদের কাজের শ্রেষ্ঠতাকে জনসম্মুখে তুলে ধরে।

শিগগিরই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হবে। ঢাকার দৃক গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সেখানে ২১ জন আলোকচিত্রীর ছবি প্রদর্শিত হবে। 

আলোকচিত্রী কুদ্দুস আলম ১৯৬৪ সালের ১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা শহরের মুন্সিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মহির উদ্দিন, মাতা-জমিলা খাতুন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। স্ত্রী-রিটা আলম। দুই পুত্র রেজওয়ানুল আলম অনন্ত ও রাউফুল আলম অয়ন। কুদ্দুস আলম পিয়ারাপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, সাদুল্লাপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক পাশ করেন। 

১৯৭৮ সালে শখের বশে ক্যামেরা হাতে ছবি তোলা শুরু করেন। তারপর থেমে থাকেননি। ক্যামেরাই এখন তাঁর পেশা এবং জীবনের চালিকাশক্তি। ২০০৩ সালে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে জাতীয় সংবাদ সংস্থা ‘ফোকাস বাংলা’ এবং ২০০৭ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল নিউজ ফটো এজেন্সি ‘দৃকনিউজ’-এর গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। রুরাল ভিজ্যুয়াল জার্নালিজম নেটওয়ার্কের জেলা প্রতিনিধি এবং গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সমাজকল্যাণ সম্পাদক তিনি।

আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে অসংখ্য প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনীগুলো হলো- ২০০৭ সালে দৃক গ্যালারিতে ‘চলমান বাংলাদেশ’, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘সেলিব্রেটিং লাইফ’, ২০০৯ সালে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ‘ডব্লিউএফপি ফটোগ্রাফি এওয়ার্ড, ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা পেইনটেড চিলড্রেনের ‘মা ও শিশু’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ২০১৯ সালে ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফটো সাংবাদিকতা প্রদর্শনী। তাঁর ছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০১১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের, ২০১২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের, ১৪১৯ বঙ্গাব্দে মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্যালেন্ডারে। তিনি ২০০৮ সালে স্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘সেলিব্রেটিং লাইফ’ প্রদর্শনীতে পুরস্কার, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ‘ডব্লিউএফপি ফটোগ্রাফি এওয়ার্ড-২০০৯, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, গাইবান্ধার সম্মাননা ২০১৪, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি সোসাইটির ফটো প্রতিযোগিতা ২০১৯-এ গোল্ড মেডেল, গাইবান্ধা জেলা ক্রীড়া সংস্থা পদক-২০২২, দৃক আয়োজিত প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্টেও তিনি পুরস্কার লাভ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়