• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৮-৬-২০২৪, সময়ঃ রাত ০৭:০৩
  • ৬৯ বার দেখা হয়েছে

সুন্দরগঞ্জে দেবে যাওয়া সেতু নিয়ে তদন্ত কমিটি, ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ

সুন্দরগঞ্জে দেবে যাওয়া সেতু নিয়ে তদন্ত কমিটি, ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ

তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার খেয়াঘাটের তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি দেবে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঝুঁকি নিয়ে দেবে যাওয়া ওই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন হাজারও মানুষ।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে দেবে যাওয়া সেতুটি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুদুল মান্নাফ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান মিঞা ও সাধারন সম্পাদক এ মান্নান আকন্দ প্রমুখ। 

চরবাসির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের এডিপি অর্থ হতে কংক্রিটের খুঁটির উপর কাঁঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য অনুমোদিত প্রকল্পটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন উপজেলা পরিষদ। অনিয়মের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ব্রিজটির নির্মাণ কাজ। ২০২৩ সালের ৩০ জুন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ দেখিয়ে ঠিকাদারকে টাকা ছাড় করেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা। 

সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার ও সাবেক উপজেলা নিবার্হী অফিসার (বর্তমান কক্সবাজার জেলা পরিষদের নিবার্হী প্রধান) মোহাম্মদ আল-মারুফ যৌর্থ স্বাক্ষরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। এরপর সাবেক ওই উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. নুরে আলম (বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি, দিনাজপুর) যৌর্থ স্বাক্ষরে অর্থ ছাড় করেন। 

বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বর্তমান উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফের নিকট জানতে চান। এক পর্যায় চাপের মুখে গত জানুয়ারী মাসে সেতুটির কাজ শুরু করেন গাইবান্ধার সাঘাটার ঠিকাদার শাহানুর ইসলাম ছানার পক্ষে সাব ঠিকাদার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার সাগীর খান। 

কংক্রিটের খুঁটির উপর কাঠেঁর পাটাতন বসানো হলেও এখন পর্যন্ত রেলিং দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে তিস্তা নদীতে বন্যার পানির স্রোতে ব্রিজটির মাঝখানের চারটি খুঁটি দেবে গেছে। সেতুটির নকশা করেন উপজেলা প্রকৌশলী। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেন উপজেলা প্রশাসন।

সাবেক উপজেলা নিবার্হী অফিসার বর্তমানে দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নুরে আলম মাধুকর ডট নিউজকে জানান, তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আড়াই মাস কাজ করেছেন। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি পদোন্নতি জনিত কারনে বদরী হয়ে যান। এরই মধ্যে অফিস সহকারিদের দেয়া ফাইলে ওই বিল ছিল এটি তিনি জানেন না। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা প্রকৌশলীর অনেকটা দায়িত্ব রয়েছে।

গত বুধবার উপ-সহকারি প্রকৌশলী মাহবুর উল-আলমকে আহবায়ক ও উপ-সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে খোকন রানাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা নিবার্হী অফিসার।

বেলকা বাজরের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, দেড়বছর ধরে কাজ না করে কিভাবে ওই টাকা পকেটে রাখেন। এটি আসলে খতিয়ে দেখা দরকার। বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়রে ২০ হাজার চরবাসির র্দীর্ঘ দিনের চাওয়া পাওয়ার এখন কি হবে। এ দায় আসলে কার। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বাজারের ব্যবসায়ী মহল।

বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেলকা বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত কুমার দাস জানান, চরবাসির দাবির মুখে ঝুকি নিয়ে সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ করা সম্ভাব হচ্ছে না। তাদের দাবি এখুনেই যে কোন ভাবেই হোক না কেন সেতৃটি মেরামত করে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিদিন একজন পথচারিকে ২০ টাকা টোল দিয়ে নৌকার মাধ্যমে পারাপার করতে হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলজার রহমানের ভাষ্য নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ও স্টিমিট প্লান মোতাবেক কাজটি না করায় বন্যার স্রোতে খুঁিট দেবে যায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অনিয়মের কারনে সেতুটির এই অবস্থা। উপজেলা প্রশাসন এ থেকে দায় এরাতে পারেন না।

ঠিকাদার সাগীর খানের ভাষ্য এই প্রকল্পটির মুল ঠিকাদার গাইবান্ধার সাঘাটার শাহানুর রহমান ছানা। সাবঠিকাদার হিসেবে সে এই কাজটি শুরু করে। কাজ শেষ না হতেই বন্যা শুরু হয়। তিস্তার নদীতে খরস্রোতের কারনে খুঁটির নিচ হতে মাটে সরেগিয়ে খুঁটি দেবে যায়। স্টিমিট প্লান মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এই মহুত্বে অনেক পানি কিছু করার নেই। ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্ম করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মোন্নাফ মাধুকর ডট নিউজকে বলেন, এটি তার আমলের কাজ নয়। তিনি সবেমাত্র যোগদান করেছেন। তার দাবি স্টিমিট প্লানটি ভুল ছিল। তিস্তার শাখানদীর ওপর কাঁেঠর ব্রিজ নির্মাণের জন্য যেভাবে ডিজাইন করার দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। এই মহুত্বে কিছু করার নাই। তবে ব্রিজটির ওপরদিয়ে পথচারীদের চলাচল সম্পুর্ণরুপে বন্ধ রাখতে হবে। কারন এটি এখন  অত্যন্ত ঝুকিসম্পূর্ণ। 

উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম মাধুকর ডট নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিত্বে দায়ীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে  কিভাবে এলাকাবাসীর দাবি বাস্তবায়ন করা যাবে সে ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়