সংস্কৃতি ডেস্ক►
সংগীতাঙ্গনে আরও এক নক্ষত্রের পতন। না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’সহ অনেক কালজয়ী গানের রচয়িতা প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, বার্ধক্যজনিত কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। গত সপ্তাহ থেকে ছিলেন আইসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে। আজ (শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মারা যান এই গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এই বাংলার মায়াভরা পথে অনেকটা দূর হেঁটেছেন। বাংলায় ভালোবেসেছেন, বাংলাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। সম্ভবত হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত স্মরণ করেছেন এই বাংলার মায়াভরা মুখ। গাইতেন গণ মানুষের গান। চলতেন সাধারণের কাতারে। তবে, ভক্তের হৃদয়ে তার উপস্থিতি ছিল অনন্য উচ্চতায়!
জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রতুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমকে গায়কের পরিবার জানান, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে দ্রুত তাকে নেয়া হয় ইএনটি বিভাগে।
জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে শিল্পীর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়। এসময় একবার হার্ট অ্যাটাকও করেন। দ্রুত কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয় শিল্পীকে। কিন্তু ফেরানো যায় নি তাকে। গত দুই সপ্তাহ এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন বরেণ্য এ শিল্পী। গেল বুধবার হাসপাতালে প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখতে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমি বাংলায় গান গাই, আলু বেচো, ছোকরা চাঁদ, ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ- এমন সব কালজয়ী গানে যুগে যুগে স্বর আর সুরে বেঁচে থাকবেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া উদাত্ত গলায় গান গাইতেন এই কিংবদন্তী। গানের কথায় প্রতিফলিত হত সমতা আর সাম্যের জয়গান।
১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। দেশভাগের পরে বাবা মায়ের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান তিনি। থাকতে শুরু করেন চুঁচুড়ায়। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’ প্রকাশিত হয় ১১৯৪ সালে। ২০২২ সালে আসে শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় ফিরে গেলেন ৮২ বছর বয়েসে। কিন্তু কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। আরও একশো বছর পরেও অগণিত ভক্ত-শ্রোতার বিক্রি না হওয়া চোখের মনিতে আলো হয়ে জ্বলবেন প্রতুল।