ভবতোষ রায় মনা/গোপাল মোহন্ত ►
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর সুগার মিলের জমিতে বসতি স্থাপনকারি সাঁওতালদের উচ্ছেদ ও হত্যার ছয় বছর আজ। আজকের এই দিনে বসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার না পেয়ে ক্ষুদ্ধ সাঁওতালরা। বিচার বিলম্বিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদিবাসী সাঁওতাল নেতারা। তারা চাঁন অতিদ্রুত অপরাধিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
২০১৬ বছরের ৬ নভেম্বর গোবিন্দঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের চিনিকলের জমি উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাঁওতাল পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় আদিবাসিদের সাঁওতাল পল্লীর বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়াসহ উচ্ছেদ, লুটপাট ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯ পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক সাঁওতাল। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডুসহ তিন সাঁওতাল, পা হারিয়ে, চোখ হারিয়ে প্রতিবন্ধি জীবন যাপন করছেন বিমল কিসকু, চরন শরেনসহ অনেক।
এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে ১৬ নভেম্বর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৯০ জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতে মামলা করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে প্রথমে আদালতের পক্ষ থেকে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই ৯০ জনকে আসামী করে আদালতে তদন্ত রির্পোট দাখিল করে।
রির্পোট সন্তোষ জনক না হওয়ায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে না রাজি করা হয়। পরবর্তীতে আদালত পুর্নরায় সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে আবারও সাঁওতালদের পক্ষ থেকে না রাজি করা হয়। এ অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালত থেকে মামলার শুনানীর জন্য আগামী বছর ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানীর দিন ধার্য করে। মামলার দীর্ঘ সুত্রিতাকে প্রহসন বলে দাবী করেন আদিবাসী সাঁওতাল নেতা ফিলিমন বাসকে। ঘটনার পর কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হলেও পরবর্তীতে সকলে জামিনে বেড়িয়ে আসে। এখন পর্যন্ত সকলে জামিনে রয়েছে।
আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুর্মু বলেন, আমরাতো আসলে এমনি এমনি মামলা করেনি। আমাদের যে তিনজন ভাই মারা গেছে, আমরাতো হত্যা বিচার চাইচ্ছি। বাগদা ফার্ম আদিবাসী ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, এই মামলার অগ্রগতিতো হচ্ছেই না বরং প্রহসনমূলক যে চালচলন সেগুলো আমার বুঝতে পারতেছি।
আদিবাসী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মুরাদজামান রব্বানী জানান, আদিবাসিদের দায়েরকৃত যে হত্যা মামলার চার্জসিট পরপর দু’বার আদালতে দাখিল করলেও না রাজি করা হয়। এই অবস্থায় ফেলে রাখতে রাখেতে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট নিজে বদলী হয়ে গেছেন। বর্তমানে যে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দায়িত্বে আছেন তিনি শুনানিই করেন না, আদেশও দেন না।
রাষ্ট্র পক্ষের এ্যাড. মিজানুর রহমান এপিপি জানান, প্রথমে পিবিআই ৯০ জনকে আসামী করে আদালতে তদন্ত রির্পোট দাখিল করলে বাদি না রাজি করায় পরবর্তীতে আদালত পুর্নরায় সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে আবারও সাঁওতালদের পক্ষ থেকে না রাজি করা হয়। আদালত আগামী বছর ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানীর দিন ধার্য করেছে।
এদিকে, গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশ্বে বাগদা ফার্মের সামনে দিনটি উপলক্ষে আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদের উদ্যোগে শোক র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।