তুষার আচার্য্য, রংপুর►
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) গত ২৯ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে ডা. মাহফুজার রহমানকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর সেদিন থেকেই তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন রমেকের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
প্রফেসর ডা. মাহফুজার রজমান অধ্যক্ষ নিয়োগের আগে রমেকের উপাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।সেইসাথে উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়।
কেন নবনিযুক্ত অধ্যক্ষের অপসারণ ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ চাওয়া হচ্ছে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া,শহীদ আবু সাইদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তনের অপচেষ্টা করা,ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর,ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতাসহ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ) এর সদস্য হওয়ার অভিযোগে রমেকের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানকে রমেক ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অপসারণ দাবী করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক,চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শিক্ষক,চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ৪ দিনের কর্মসূচী:
ডা মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার পর গত ৩০ অক্টোবর রমেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী,চিকিৎসক ও কর্মচারীরা অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবী করেন।এসময় বিক্ষোভ শেষে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেন।এরপর তারা পরেরদিন বৃহস্পতিবার একই কর্মসূচী পালন করেন রমেক ক্যাম্পাসে।৩১ অক্টোবর চলমান বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয় নিপীড়ন বিরোধী চিকিৎসক ও ছাত্রসমাজ।শুক্রবার আন্দোলন স্থগিত রেখে গতকাল শনিবার আবারো বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।এসময় দাবী মেনে নেয়া নাহলে কঠোর আন্দোলন ও কর্মবিরতির হুশিয়ারী দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা।আজ রবিবার সকালে পূর্বের কর্মসূচীর মতোই বিক্ষোভ মিছিল করে বক্তব্য দেয় চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।এসময় তারা বলেন, “অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অব্যাহতি দেয়া না হলে রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) মঙ্গলবার দুই ঘণ্টা করে ইনডোর ও আউটডোর সেবা বন্ধ থাকবে। সেইসাথে বুধবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন থাকবে।”
নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমান এর অবস্থান:
৩০ অক্টোবর ডা মাহফুজার রহমান তার পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভের পরে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন,আমার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অসত্য এবং ভিত্তিহীন।আমি আমার জীবনে কখনো রাজনীতি করিনি।যদি আমার সাথে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব।এখন যা কিছু হচ্ছে সবই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হচ্ছে।এই অভিযোগগুলোর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।এরপর ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন,“ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিগত সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২৯ শে অক্টোবর আমাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।গত ৩০ শে অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করতে গেলে কতিপয় চিকিৎসক ও বহিরাগতরা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আমাকে বাধা প্রদান করেন। তারা বিগত সরকারের রাজনৈতিক দোসর হিসেবে আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে।তারা আরও অভিযোগ করে যে আমি ছাত্র আন্দোলনের নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগ করি।এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম যিনি করেছেন তিনি দেশের একটি স্বনামধন্য গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে বলেন সঠিক রিপোর্ট প্রদানের জন্য আমি তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছি।একটি রাজনৈতিক পক্ষ চাচ্ছে তাদের লোক অধ্যক্ষ হিসেবে আসুক।তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে এরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
এদিকে আজ সকালে রংপুর প্রেসক্লাব চত্ত্বরে অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধন করেন সচেতন রংপুরবাসী,সাবেক ও বর্তমান মেডিকেল শিক্ষার্থী ও অধ্যক্ষের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।সেখানে তারা জানায়, অধ্যক্ষ ডা মাহফুজার রহমান এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে এবং কর্তব্য পালন করতে বাধা দেয়া হচ্ছে।রমেকের বহির্ভূত ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের এনে বিক্ষোভ করা হচ্ছে।তাদের দাবীকৃত সকল অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন।
রমেকের বর্তমান পরিস্থিতি:
চলমান বিক্ষোভ মিছিল ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আন্দোলনের কারণে পিছিয়ে গিয়েছে কয়েকটি পরীক্ষা,হচ্ছে না নিয়মিত পাঠ দান,অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দেয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দাপ্তরিক কার্যক্রম।তবে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালু আছে।