আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ ►
মুজিববর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আবাদপুরে নির্মানাধীন ৩০টি একক গৃহ নির্মাণ কাজে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলামের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৫ মাসেও ৩০টি গৃহ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করতে না পারায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা. আলপনা ইয়াসমিন লিখিত চিঠি দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলামকে শোকজ করেছেন। ২৯ নভেম্বর তারিখে ইস্যুকৃত পত্র প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। ২৯ নভেম্বর শোকজ লেটারটি পিআইওকে দেয়া হয়েও চিঠিটি সাংবাদিকদের হাতে আসে।
শোকজ পত্রের অনুলিপি প্রকল্প পরিচালক, আশ্রায়ন-২ প্রকল্প, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা বরাবরে দেয়া হয়েছে। শোকজ চিঠিতে বলা হয়েছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীন ‘‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’’ ‘‘ক’’ শ্রেণীর পরিবারের জন্য একক গৃহ নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না করায় শোকজ প্রদান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন-২ শাখার ২৯ মে ২০২২ তারিখে ইস্যূকৃত পত্র যা ৬ জুন ২০২২ তারিখে পাওয়া যায়। বদলগাছী উপজেলার ৩০টি একক গৃহ নির্মানের জন্য সর্বমোট ৭৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের কাজ অবশিষ্ট রেখেছেন যার ফলে উপকারভোগী উঠানো সম্ভব হচ্ছেনা এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং উপকারভোগীরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে আছে। জুলাই মাসে পুরোদমে কাজ শুরু হলেও আপনার অবহেলার কারনে আবাদপুর আশ্রায়ন প্রকল্পে একই জায়গায় নির্মানাধীন মাত্র ৩০টি বাড়ীর কাজ পাঁচ মাসেও সম্পন্ন হচ্ছেনা। আপনার অবহেলার কারনে এবং সরজমিনে দেখে বোঝা যায় কম মিস্ত্রি দিয়ে এবং কাজের প্রত্যেকটি স্টেজে বিলম্বের কারনে দেরী হচ্ছে মর্মে প্রতিয়মান হয়। আপনি ৩০টি ঘরের ১০০% কাজ ৫ মাসেও কেন সম্পন্ন করতে পারেননি তার সন্তোষজনক ব্যাখা পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে জানানোর জন্য বলা হলো।
বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন অফিসার (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আমি শোকজ লেটারের জবাব ইতিমধ্যে দাখিল করেছি এবং আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। ২/১টি শেষ হয়েছে সেগুলোতে ইতোমধ্যে উপকারভোগীরা উঠতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে বর্ষা শুরু হওয়ায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অতি দ্রুত কাজ শেষ করে উপকারভোাগীদের মাঝে হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা. আলপনা ইয়াসমিনের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, ৫ মাসেও পিআইও মাত্র ৩০টি বাড়ী নির্মান করে হস্তান্তর করতে না পারার এবং নির্মাণ কাজে তার অবহেলার বিষয়টি প্রতিয়মান হওয়ার কারনে তাকে শোকজ করা হয়েছে। সরকারী কোন কর্মকর্তাকে শোকজ একটি গোপননীয় বিষয়। এটা নিয়ে এর চেয়ে বেশী কথা বলা সম্ভব না। তবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কিছু বাড়ীর কাজ শেষ হয়েছে। অতি শীঘ্রই বাড়ী গুলো উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
সরজমিনে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আবাদপুর গ্রামে গিয়ে নির্মানাধীন বাড়ীগুলোতে শেষ মুহুর্তেও কাজ করতে দেখা গেছে। কোথাও রং করা হচ্ছে আবার কোথাও টিনের চালা, দরজা, জানালার কাজ আবার কোথাও ইট সিমেন্টের কাজ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজ অন্য উপজেলাগুলোতে অনেক আগেই শেষ করে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক উপজেলাার পিআইও বলেন, প্রতিটি অর্থ বছরের কাজ অর্থ বছরের মধ্যে শেষ করার নিয়ম। আমরা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে বাড়ী ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করেছি। বদলগাছী উপজেলায় ৫ মাসেও কেন কাজ শেষ হয়নি তা সংশ্লিষ্ট পিআইও বলতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কাজে তার অবহেলা রয়েছে বলে তিনি জানান।