• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৫-৪-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:২৯
  • ১৩০ বার দেখা হয়েছে

সেচ পাম্পের সোলার পাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ফেটে চৌচির ৪০ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষেত

সেচ পাম্পের সোলার পাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ফেটে চৌচির ৪০ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষেত

জাহিদ খন্দকার ►

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা সীমানা সংলগ্ন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের সোলার চালিত সেচ পাম্প মেশিনের মেইন সুইস খুলে নিয়ে সেচ কার্য বন্ধ করায় প্রায় ৪০ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। পাওনা টাকা না দেয়ার কারনে গত ১০ দিন আগে এই সোলার সেচ পাম্পটির মেইন সুইস ও সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়া হয়েছে বলে জানান সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেডের এরিয়া ম্যানেজার সুজন মিয়া। বিষয়টি তদন্তপুর্বক সোলার পাম্পটি চালু করে কৃষকদের ক্ষতি পুরনের জোর দাবী সচেতন মহলের। জেলা কৃষি বিভাগ জনালেন তদন্তকরে প্রয়োজনীয়র ব্যবস্থা নেয়ার কথা।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা বৈকুন্ঠপুর গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া। অবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। জমি প্রস্তুত করে বোরো ধানের চারা রোপনসহ সার-কৃটনাষক দিয়ে ধানের শীষ যখন বের হবে ঠিক সেই সময় সোলার পাম্পের মেইন সুইস খুলে নিয়ে গত ১০ দিন থেকে সেচ পাম্পের সৌর সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে তার ৭/৮ বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত পানি অভাবে লালচে হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমিগুলে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

কৃষক রাজা মিয়া জানান, সোলার কোম্পানি মেইন সুইস বন্ধের ফলে আমার প্রায় ৭/৮ বিঘা জমির ধান পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত ১০ দিন থেকে অনেক চেষ্টার পরেও সোলার কোম্পানি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এখন ফসল নষ্ট হলে আমাদের ক্ষতিপুরন কে দেবে ?

সোনাইডাঙ্গা বৈকুন্ঠপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর ব্যাপরি জানান,“ সোলার চালিত সেচ পাম্প মেশিনের মেইন সুইস খুলে নিয়ে সেচ কার্য বন্ধ করায় আমার দুই বিঘা জমিতে গত ১০ দিন থেকে পানি দেয়া হয়নি। ফলে আমার জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আর দু-তিনদিন গেলে ফসল পুড়ে যাবে। সরকার কৃষকের সুবিধায় সৌর সেচ দিলেও একটি মহল আর্থিক সুবিধা লোপাটের ধান্দায় সেচ পাম্পটির মেইস সুইস খুলে নিয়ে গেছে। আমার এর বিচার চাই ?

সোনাইডাঙ্গা বৈকুন্ঠপুর গ্রামের কৃষক মন্তাজ ব্যপারি জানান, সোলার কতৃপক্ষ কৃষকের উপকারের জন্য সোলার স্থাপন করেছেন আমরা যদি সোলার পাম্প থেকে পানি না পাই আর যদি ধান ক্ষেত পানির অভাবে পুড়ে যায়, তাহলে এই সোলারের কি দরকার ছিল? আমরা ধানের ক্ষতিপুরন চাই।

একই গ্রামের মো: রেজাইল করিম জানান, সোলার পাম্পটি বন্ধ করে দেয়ার ফলে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের, এভাবে আর কয়েকদিন চললে সব ধানের চাড়া মারা যাবে। সোলার কোম্পানি কেন আমাদের এই ক্ষতি করছেন ? আমাদেরকে এখন ফসল বাচঁতে অনেক দুর থেকে পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সেচ খরচও দিগুন হচ্ছে।  বিষয়টি তদন্ত কওে ব্যবস্থা নেয়া হোক ।”

সোনাইডাঙ্গা বৈকুন্ঠপুর সোলার সেচ পাম্প মাঠ পরিচালক ফিরোজ মিয়া জানান, “ প্রায় ৭ বছর আগে এই সোলার পাম্পটি পরিচালনা করার জন্য মাসে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিডিট। কৃষকদের থেকে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা সেচ পাম্প ভাড়া তুলে এই সেলার কোম্পানীর কতৃপক্ষকে দেই। এক বছর নিওমিত বেতন দেয়ার পরে আমার বেতন বন্ধ করে দেয়।

২০২১ ও ২০২২ সালের দুই বছরে আমাকে সেচ পাম্পটি আর্থিক চুক্তিতে চুক্তি দেয়। এই দুই বছরে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেডের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনকে আমি নগদ ১ লাখ টাকা পরিশোধ করি। ২০২৩ সাল শুরু হওয়ায় তারা বার বার টাকার চাপ দেয় আমি ধান কাটা-মাড়াইয়ের পরে টাকা দিতে চাই সোলারকতৃপক্ষ কথা শোনেন নি। সোলার ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন ও এরিয়া ম্যানেজার সুজন মিয়া এই সোলার সেচ পাম্পটির মেইস সুইসসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খুলে নেন। ফলে সেচ পাম্পটির কার্য বন্ধ হয়।”

সোনাইডাঙ্গা বৈকুন্ঠপুর সোলার সেচ পাম্প ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন জানান, এই সোলার সেচ পাম্প  বাৎসরিক খরচ বাবদ ৪৫ হাজার টাকা পাওনা আছে  সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেড। এই করনে মেইস খুলে নিয়ে গেছে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেডের এরিয়া ম্যানেজার সুজন মিয়া। ”

কৃষকদের ফসলের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে সালেক সোলার পাওয়ার লিমিটেডের এরিয়া ম্যানেজার সুজন মিয়া মুঠো ফোনে জানান, আমি কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মেইস সুইস খুলে এনেছি। পাওনা টাকা না দিয়ে সংযোগ দেয়ার সুযোগ নেই।”

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম জানান, “এই ভরা মৌসুমে জমিতে পানি দিতে না পারলে মারাত্বক ক্ষতির আশংকা আছে। সেচ সংযোগ দেয়াসহ মেইন সুইস বন্ধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”

 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়