• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-১০-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৩:৪৩
  • ১৫১৯ বার দেখা হয়েছে

গাইবান্ধার মেধাবী পরিবারের সন্তান মাহিন এখন বিখ্যাত আইফোন কোম্পানির ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার

গাইবান্ধার মেধাবী পরিবারের সন্তান মাহিন এখন বিখ্যাত আইফোন কোম্পানির ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার

মোদাচ্ছেরুজ্জামান মিলু  ►
যে কোনো সফলতাই আনন্দের। কোনো সফলতা যদি এনে দেয় নিজের জেলার এবং দেশের সম্মান তবে গর্বে বুক ভরে যায় আমাদের। তেমনি একটি বিশেষ সফলতার কাহিনী নিয়েই এই লেখা। বিশ্বের আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক সকল মোবাইল ফোন কোম্পনিগুলোকে পেছনে ফেলে ক্রমবর্ধমান মোবাইল ফোনের জগতকে তাক লাগিয়ে ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি স্টিব জবস বাজারে নিয়ে আসেন আই ফোনের প্রথম সিরিজ। এই আইফোনের কোম্পানিতে ডিজাইনার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ্যতার ভিত্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন গাইবান্ধার মেধাবী পরিবারের সন্তান মাহিন মাশরুর। আই ফোনের প্রথম সিরিজের বিক্রি শুরু হয় সে বছরের ৯ জুন থেকে। এরপর একে একে অ্যাপল আই ফোনের ১৩টি সিরিজ বাজারে এনেছে। এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তারা বাজারে এনেছে আইফোনের ১৪ তম সিরিজ। প্রথম আইফোন প্রকাশের পর ১৫ বছরে আইফোনের ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। প্রযুক্তি জগতে ‘টেকনো জায়ান্ট’ এর খেতাব পেয়েছে তারা। ব্যবসা পৌঁছে গিয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারে। বিশ্বের সকল সেলফোন বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান এই প্রতিষ্ঠানটির ধারের কাছেও নেই। মোবাইল ফোন জগতে আইফোনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণ হিসেবে জানা যায় এর আধুনিক মানের নকশা এবং আইওএস নামের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম। 

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আইফোন হাতে নিলেই এর স্মার্ট ডিজাইনের কারণে একটা অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হয়। আইফোনের ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন গাইবান্ধা তথা বাংলাদেশের সন্তান মাহিন মাশরুর। গাইবান্ধাবাসী জেনে অবাক হবেন যে এই মাহিন গাইবান্ধার পলাশপাড়ার মোমিনুল আজম সবুজ এর পুত্র। বাবার চাকরি সূত্রে মাহিনের জন্ম ১৯৯৯ সালে ঢাকার উত্তরায়। সে যখন উত্তরার ‘ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন সেন্টারের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন বাবা মা’র সাথে চলে আসে কানাডায়। এরপর ২০১৮ সালে মাহিন ভর্তি হয় কানাডার মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ ছিলো মাহিনের। ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত থেকে তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। 

এ বছরের প্রথম দিকে যখন তিনি তার ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত তখন আবেদন করেছিলেন চাকরির। ইলনমাস্কের টেসলা, স্পেসএক্স, এ্যাপল এবং অনেক কানাডিয়ান নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ইন্টারভিউ এর ডাক পেয়েছেন। মাহিন তার শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ করার আগেই ইন্টারভিউ এর চারটি ধাপ অতিক্রম করে এ্যাপলের আইফোন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেয়ার সুযোগ পায়। এ বছরের ১৫ জুলাই তিনি যোগ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কুপার্টিনোর স্টিভ জবস এর সেই বিখ্যাত ভবন এ্যাপল পার্কে। বিশ্বের টেকনো জায়ান্ট অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানে ২২ বছরের একজন যুবকের আইফোনের ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার এবং বাংলাদেশি মুদ্রায় বার্ষিক পৌনে দুই কোটি টাকা বেতনের চাকরি পাওয়া নিয়ে গাইবান্ধাবাসী গর্ব করতেই পারে।

আইফোনের পরবর্তি সংস্করণের নক্সায় বাংলাদেশের এই তরুণের মেধা নিঃসন্দেহে কোম্পানির সফলতাকে আরো গতিশীল করবে। মাহিনের বাবা মা দুজনেই কৃষিবিদ। দেশে তার বাবা মোমিনুল আজম চাকরি করতেন বিসিএস (ডাক) ক্যাডারে আর মা মাহমুদা আনোয়ার বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে। একদিকে মাহিনের বাবা-মা’র ভ্রমণপীপাষু মন অপরদিকে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য যেহেতু সেখানেও ভালো ভালো সুযোগ আছে তাই সবকিছু বিবেচনায় রেখে ২০১০ সালে তারা পাড়ি জমান কানাডায়। মাহিনের বড় ভাই মুহিবও কানাডায় মেধার স্বার রেখেছেন। মুহিব ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর মেডিকেল স্কুলে পড়াশুনা করছেন। মাহিনের বাপ-চাচা গোষ্ঠীর পরিবার নিঃসন্দেহে গাইবান্ধার জন্য এক অনুকরণীয় পরিবার। পরিবারকে কেন মেধাবী বলা হচ্ছে সে জন্য তার পরিবারের পরিচিতি উল্লেখ করা বিশেষভাবে প্রয়োজন।  

মাহিনের দাদা আলহাজ্জ ফয়জার রহমানের বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গ্রামে। ১৯৯১ সালে তিনি গাইবান্ধা সদর থানার এসিল্যান্ড অফিসের কানুনগে পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। দাদী নুরুন নেহার বেগম গৃহিনী। পলাশপাড়া গাইবান্ধার বাসায় তিনি বসবাস করেন।

মাহিনের বড় চাচা মোঃ নজরুল ইসলাম বেঁচে নেই। তার বড় মেয়ে নওশিন জাহান যিনি একজন কৃষিবিদ এবং ঢাকার একটি কলেজে শিকতা করেন। ছেলে নিনাদ রাহুল ইফতেখার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢাকার এনার্জিপ্যাক অফিসে চাকরি করেন। আরেক চাচা মোঃ খায়রুল ইসলাম বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট। তার একমাত্র মেয়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি কনসালটেন্সি ফার্মে চাকরি করেন। 

আরেক চাচা ডঃ আনোয়ারুল ইসলাম (দিপু) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্রেজারার। চাচী শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং বর্তমানে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান। বড় মেয়ে নাফিজা আনজুম প্রমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রি নিয়ে বাবার সহকর্মী হিসেবে যোগ দেন শাহজালাল বিজ্ঞান এ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রমি তার স্বামীর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। ছেলে আজওয়াদ আনজুম ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার অ্যান্ড ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনিও সস্ত্রীক এখন পিএইচডি করছেন ফোরিডায়।

চাচা ইমামুল আজম শাহী দেশের বৃহৎ এনজিও  ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম হেড হিসেবে কাজ করছেন। তার ছেলে তীর্থ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র। এদিকে ডিজাইনার ইঞ্জিনিয়ার মাহিনের বড়ভাই মুহিব অসম্ভব  মেধাবী ছাত্র। কানাডার মতো দেশে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন যা গোটা পরিবারের সদস্যদের গর্ব করার মতো এবং অন্য ছাত্রদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়