পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি ►
রংপুরের পীরগঞ্জে কৃষকদের গোয়ালঘর ফাঁকা করছে র্যাম্পি স্কিন নামের নতুন ভাইরাস রোগ। এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকদের সংসারের একমাত্র সম্বল গরু। পল্লী অঞ্চলের কৃষক সারা বছর চাষাবাদ করে। আর এই চাষাবাদের অর্থ যোগান দেয় তাদের ঘরে লালন পালন করা পশু। অধিকাংশ চাষিরাই চাষাবাদে বেশিরভাগ সময় লোকসান গুনে থাকে। বছর শেষে লোকসানের বোঝা হালকা করে তাদের এই গরু।
সাম্প্রতিক সময়ে সেই গরু নতুন আতংক ভাইরাস লাম্পি স্কিনে গোয়াল ঘর খালি করছে। রংপুরের পীরগঞ্জে একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে গরুর লাম্পি স্কিন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন করে গরু আক্রান্ত হচ্ছে লাম্পি স্কিন নামের ভাইরাস রোগে। চিকিৎসা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় গোটা উপজেলার কৃষককুল।
উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা সরেজমিন ঘুরে কথা হয় গরু মালিকদের সাথে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ রোগ এতোটাই ভয়াবহ যে কোনো ঔষধ কাজ করছে না। সুস্থ সবল গরু সন্ধ্যায় গোয়াল ঘরে তুলে রেখে সকালে গিয়ে দেখা যায় গরুর গোটা শরীর ফুলে গেছে এবং খুড়িয়ে হাটছে। ফুলে যাওয়া স্থানগুলো দু’এক দিনের মধ্যেই গরুর চামড়ায় ফোস্কা পড়ার মতো হবার পর দগদগে ঘা হয়। এরপর ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হয়।
পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মলম, তেল, পাউডার জাতীয় কেন্ডুলা ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসার পরেও অনেক গরু মারা যায়। বিশেষ করে শংকর জাতের ছোট বাছুরগুলোকে এই রোগে আক্রান্ত হলে আর বাঁচানো যায় না। এলাকার লোকজন বলছেন, চিকিৎসকের অভাবে লাম্পি স্কিনের স্থানীয় হাতুড়ী চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে এন্টিবায়োটিক ধরনের ইঞ্জেকশন পুশ করে ইচ্ছেমতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও এলাকায় কিছু হোমিও চিকিৎসকও এক হাতে টাকা আরেক হাতে পানি পড়া দিয়ে টাকা কামাচ্ছেন। এ-সব চিকিৎসার ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। উল্টো গ্রামে-গঞ্জে তাদের দেখাই মেলে না। এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন হাতুড়ে চিকিৎসকরা।
কাবিলপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের ইউনুছ আলী জানান, আমার দেশি জাতের ৩ মাসের বাছুর এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পুরো শরী ফুলে গেছে। গত একমাস থেকে বাছুটি দাঁড়াতে পারে না। কোলে করে গোয়াল ঘর থেকে বর করতে হয়। এটির সারা শরীরের ফুলা স্থানগুলো চামড়া উঠে গেছে। কিছু খেতেও পারে না। আমি বাতলের মাধ্যমে দুধ খাওয়াই। মশা মাছির এড়াতে সবসময়ই মশারীর ভিতরে রাখি। মলম এবং পাউডার জাতীয় ঔষধ ৩ বার ব্যবহার করছি। শরীরের প্রতিটি ক্ষতস্থানে পোকা রয়েছে। আমার সংসারে আশা ভরসা এই গরু। মানুষের জমিতে কাজ করে আমার সংসার চলে। বাছুরটির পাশে সারাদিন আমাকে বসে থাকতে হয়। গত এক মাস হয়ে গেল আল্লাহ ভালো জানেন আমার কপালে কি আছে ?
একই এলাকায় গত ১ মাসের মধ্যে শামসুল আলম, সাইফুল ইসলাম, বাদশা মিয়া, দেলবার রহমান এবং মমিন মিয়ার একটি করে গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে মশিউর রহমান জানান, ৮০ হাজার টাকার বিদেশি বাছুর মারা গেছে তার। গরুটির স্বাস্থ্য খুবই ভালো ছিল এবং আগামী ঈদে এটি কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো। গরুটি দিয়েই তার গায়াল ঘর ভারা ছিল। এটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এখন তার গোয়াল ঘর ফাঁকা পড়ে আছে।
বড় আলমপুর এলাকার রুহুল আমিন, আব্দুর রশিদ মিয়া এবং বাশপুকুরিয়া গ্রামের রেজাউল করিম জানান, কিছুদিন আগে তাদের এলাকার ছোট ছাট বাছুর গুলো ভাইরাস রোগে শেষ হয়ে গেছে। বন্যার সময় করতোয়া নদীতে প্রতিদিন মরা বাছুর পানিতে ভেসে দিয়েছে এলাকার লোকজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিস্পদ কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লাম্পি স্কিন রোগটি এখন কমেছে। তিনি বলেন, এ রোগের চিকিৎসা শুধু মাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ। চামড়া উঠে যাওয়া ক্ষতস্থানগুলো শুকাতে একটু সময় লাগে। কোনো গরু লাম্পি স্কিন রাগে আক্রান্ত হলে গরুটিকে সবসময় মশারীর ভিতর রাখতে হবে এবং গোয়াল ঘর পরিস্কার পরিছন্নতা রাখতে হবে। এই রোগটি মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। প্রাণী সম্পদ অফিসারের লোকজন সবসময়ই গরুর মালিকদেরকে মশারী বা গোয়াল ঘর পরিস্কার রাখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও তিনি জানান।