নিজস্ব প্রতিবেদক►
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও তাদের পৈতৃক জমি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও এ.এল.আরডি। কর্মসূচিতে আদিবাসী ঐতিহ্যের প্রতীক তীর-ধনুক, ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে শতাধিক সাঁওতাল-বাঙালি নারী-পুরুষ অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাগদাফার্ম সংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম থেকে সাঁওতাল-বাঙালিরা একসঙ্গে বাসযোগে গাইবান্ধা জেলা শহরে আসেন। তারা শহরের গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সুখশান্তির বাজার এলাকায় নেমে দাবি-দাওয়া সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা। পরে আবারও মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন আদিবাসী-বাঙালিরা। সেখানেও সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ, মহিমাগঞ্জ সুগার মিলের এমডি, জিএম তাদের সন্ত্রাসীরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ সাঁওতালদেরকে উচ্ছেদ করতে গেলে দফায় দফায় সংঘর্ষ সাঁওতাদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ৩০ জন সাঁওতাল আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিন সাঁওতাল মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান। অগ্নিসংযোগে পুড়ে যায় সাঁওতালদের ঘরবাড়ি। পরে জয়পুরপাড়ায় সন্তানদের জন্য একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কতিপয় চিহ্নিত বাঙালি ভূমিদস্যু বিদ্যালয়ের মাঠটি আবারও দখলে নেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছে। ফলে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাঁওতাল শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। স্মারকলিপিতে নিরীহ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষের নির্বিঘ্ন শান্তিপূর্ণ বসবাসের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় সাঁওতালদের পৈতৃক ১ হাজার ৮৪২.৩০ একর জমি ফেরত, সাঁওতাল পল্লীতে বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট ও তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ সকল আসামীর গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, অ্যাডভোকেট কুশলাষীশ চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট ফারুক কবীর, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা আহবায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা, থমাস হেমব্রম প্রমুখ।