মাধুকর ডেস্ক►
বিশ্বে নতুন করে পুরনো এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের মতো এইচএমপিভি নামের এই ভাইরাস মানুষের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।
প্রথমদিকে চীন ও জাপানে সংক্রমণ হলেও বর্তমানে ভারতেও ভাইরাসটির সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস কী, ভাইরাসটির লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও চিকিৎসকরা যা বলেছেন, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
এইচএমপিভি কী?
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) হলো এক ধরনের শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। এটি সাধারণত ঠান্ডা-সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টজনিত গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাসটি মূলত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
যেভাবে ছড়ায়
১। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে নির্গত ড্রপলেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে এটি অন্যের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে।
২। ভাইরাস আক্রান্ত দরজার হাতল, মোবাইল ফোন বা অন্য কোনোবস্তু স্পর্শ করার পর হাত চোখ, মুখ বা নাকে লাগালে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৩। সংক্রামিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলে (যেমন হাত মেলানো বা চুম্বন) ভাইরাস ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হলেও কখনো কখনো এটি গুরুতর হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:
১. হালকা লক্ষণ: হালকা জ্বর, সর্দি, কাশি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা হতে পারে।
২। গুরুতর লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ (পোস্টমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস), বুকে চাপ অনুভব, ক্রমাগত উচ্চ জ্বর, খাবার গ্রহণে অনীহা (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে) দেখা দিতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এটি মূলত স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেরে ওঠে। তাই এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মূলত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যেমন জ্বর কাশি কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন, নাক বন্ধ থাকলে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করতে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার, শ্বাসকষ্টের জন্য বাষ্প গ্রহণ বা নেবুলাইজার ব্যবহার। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে হাসপাতালে অক্সিজেন থেরাপি, ফুসফুসের সংক্রমণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে, ইমিউনোথেরাপি (জরুরি ক্ষেত্রে) দেওয়া যেতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাস সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে লক্ষণগুলো গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতা
এইচএমপিভি সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে কোভিড-১৯ এর মতোই সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা হাতের কনুই দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরতে হবে। বাইরে থেকে এসে ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এইচএমপিভি ভাইরাস বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ এবং চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই যুগ আগে থেকেই সদ্য আলোচিত এইচএমপিভি ভাইরাস রয়েছে। এইচএমপিভি ভাইরাস একটি সাধারণ নৈমিত্তিক রোগ, তাই এটা নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে সংক্রমণ যেন ব্যাপক হারে বাড়তে না পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।