তাজুল ইসলাম রেজা, সাদুল্লাপুর►
সকাল-দুপুর অথবা সন্ধ্যা যানজট যেন সারাদিনের নিত্যসঙ্গী সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরবাসীর। প্রতিদিনের অসহনীয় যানজটে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা। বছরের পর বছর এই অসহনীয় যানজট নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার আলোচনা হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ কিংবা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কোন উদ্যোগ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ। ফলে অসহনীয় যানজটে সাদুল্লাপুর উপজেলাবাসীর ভোগান্তি বেড়েই চলছে।
উপজেলা শহরবাসীর অভিযোগ, এই যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত সংখ্যক অটোরিক্সা চলাচল, যততত্র অটোরিক্সা রেখে যাত্রী উঠানো-নামানো, যাত্রীর জন্য সড়কের পাশে অটোরিক্সাগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে রাখা এবং বিশৃঙ্খলভাবে অটোরিক্সা চলাচল। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সাদুল্লাপুরে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগএবং বিকল্প কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা শহরের পাঁচ মাথা। এখানে গাইবান্ধা, মাদারগঞ্জ, নলডাঙ্গা, তুলসীঘাট এবং ধাপেরহাট ও ভাতগ্রাম থেকে পাঁচটি সড়ক মিলিত হয়েছে। এর আশেপাশে উপজেলা সদরের মুল শহর, কাঁচা বাজার ও সাদুল্লাপুর থানা, ব্যাংক এবং বিপনী বিতানগুলো অবস্থিত। দেখা যায় ব্যস্ততম এই এলাকায় সড়কের পাশে এবং প্রতিটি মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক, অটোরিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। আবার এখানেই যাত্রীবাহী অটোরিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক ও সিএনজিগুলো এখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে বসেছে বিভিন্ন দোকানপাট। ফলে সারাক্ষণই সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
সাদুল্লাপুর শহরের কয়েকজন বাসিন্দা ও অটোরিক্সা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিন কারণে সাদুল্লাপুর শহরে যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত সংখ্যক অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও অটোভ্যান চলাচল। যততত্র অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও অটোভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা এবং যাত্রী উঠানো-নামানো। এছাড়া সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে নানা সামগ্রীর দোকান দিয়ে রাখা।
এই উপজেলা শহরে কতগুলো অটোরিক্সা, ইজিবাইক, সিএনজি ও অটোভ্যান চলাচল করে, সে হিসাব উপজেলা পরিষদ এর কোন সরকারি দপ্তরে কিংবা সদর বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে নেই। তবে পুলিশ ও অটোরিক্সা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন উপজেলা শহরে হাজারের বেশি এসব যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই।
সাদুল্লাপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক মোঃ নুরুননবী বলেন, “শহরে ইজিবাইক, অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যান ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়কের মোড়গুলোয় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।’ তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। তখন শহরের অবস্থা ভালো ছিল। এখন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনে ট্রাফিক পুলিশ কিংবা কোন কেউ দায়িত্ব পালন না করায় যানজট তীব্র আকার ধারন করেছে।
শহরের মধ্যপাড়া বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মাহমুদুল হক মিলন বলেন, গাইবান্ধা সদর থেকে সাদুল্লাপুর-পীরগঞ্জ ও বড়দরগাঁ হয়ে রংপুর যাতায়াতে দুরত্ব কম এবং অনেক সহজ হওয়ায় শত শত পরিবহন এই পথে যাতায়াত করে। এছাড়া ধাপেরহাট থেকে সাদুল্লাপুর হয়ে সুন্দরগঞ্জ, বামনডাঙ্গা, পীরগাছা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট যাতায়াত এই পথে দুরত্ব কম এবং সময় কম লাগে। ফলে এই পথেও চলাচল করে শত শত যানবাহন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে প্রবেশ করেন। ফলে এসব রোডে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।
এই শহরের অটো রিক্সাভ্যান চালক সাবু মিয়া (৫৫) নিজের ভাষায় বললেন, ‘পোত্তেকদিন (প্রতিদিন) সাদুল্লাপুরের পাঁচ মাথার মোড়ত জাম নাগি থাকে। জামের জন্নে ভাড়া কমি গ্যাচে।’
শহরের নলডাঙ্গা রোডের ব্যবসায়ী লিজু মিয়া (৩৫) জানালেন, সড়ক ঘেঁষে দোকান। দিনরাত অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। শব্দদূষণে কান জ্বালাপোড়া করে।
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের প্রাইমারী শিক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কাজে ধাপরেহাট রোড হয়ে উপজেলা শহরে আসতে হয়। যানজটের কারণে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।
উপজেলা রিক্সা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রহুল আমিন সরকার জুয়েল জানান, শহরের যানজট সমস্যার সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষ করে গাইবান্ধা থেকে আসা ইজিবাইক, অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যানের জন্য উপজেলা পরিষদ কিংবা হাসপাতাল এলাকায় অস্থায়ী স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা। একই ভাবে মাদারগঞ্জ থেকে আসা ওই পরিবহনগুলোর জন্য পশ্চিমপাড়া তালের তলে স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা। নলডাঙ্গা থেকে আসা এসব যানবাহনের জন্য উপজেলা ভুমি অফিস এলাকায় স্থায়ী স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা। তুলসীঘাট থেকে আসা পরিববহনগুলোর জন্য পোস্ট অফিস এলাকায় এবং ধাপেরহাট ও ভাতগ্রাম থেকে আসা যানবাহনগুলোর জন্য সোনালী ব্যাংক এলাকায় স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা হয়ে শহরে যানযট একেবারে কমে যাবে। তিনি আরও বলেন এছাড়া সড়কের পাশ থেকে ফেরি দোকানগুলো উচ্ছেদ করা দরকার এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এই মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা অতীব প্রয়োজন।
এসব বিষয়ে বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল কাইয়ুম হুদা বলেন, যানজট নিরসনে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবলের অভাবে স্থায়ীভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি’র সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। কিন্ত নানা কারনে এনিয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় যানজট দিন দিন বেড়েই চলছে।
সাদুল্লাপুর থানার ওসি মো: তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, তিনি এ থানায় নতুন যোগদান করেছেন। তবে যানজট নিরসনের জন্য বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা অব্যাহত আছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বহী অফিসার মোঃ কাওছার হাবীব জানান, এই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে। শীঘ্রই বিষয়টি সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।