নিজস্ব প্রতিবেদক►
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের সম্মানে গাইবান্ধায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ (বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতরা তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের আকুতি জানান। একইসঙ্গে আন্দোলনে শহিদ কর্মক্ষম পরিবারের সদস্যরা কর্মসংস্থানের দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণসভার শুরুতেই শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে আহতরা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরা আন্দোলনের দিনগুলোর বিভীষিকার পাশাপাশি সন্তান হারানোর বেদনার কথাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, আন্দোলনের বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনও আতকে উঠি। এখনও আহতরা চিকিৎসার অভাবে শরীরে গুলি ও ক্ষত চিহ্ন নিয়ে কাতরাচ্ছে। অনেকে অঙ্গ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অনেক পরিবার তাদের কর্মক্ষম সন্তানদের হারিয়েছে। এতে করে সেইসব পরিবারে তৈরি হয়েছে সংকট। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানদের হারিয়ে তারা অসহায় জীবনযাপন করছেন। সর্বপরি আহতদের এবং তাদের ও শহিদদের পরিবারের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত আন্দোলনে আহত ১২৯ জনের তালিকা করা হয়েছে। কয়েকদিনের চূড়ান্ত তালিকা করা শেষ হবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে বলেন, সাধ্যমত আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামীতেও তাদের পাশে থাকা হবে।
স্মরণসভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে আহত ও শহিদদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তারা ‘ফ্যসিস্ট’ শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেন এবং দেশে আর যেন কোনো স্বৈরাচারী সরকারের আবির্ভাব না ঘটে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.কে.এম হেদায়েতুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা উপস্থিত ছিলেন। এসময় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধার সমন্বয়ক মেহেদী হাসান, বায়েজিদ বোস্তামি জিম, বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, সহ-সভাপতি শহীদুজ্জামান শহিদ, জামায়াতে ইসলামীর জেলার সাবেক আমির ডা. আব্দুর রহীম, বর্তমান জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক, গণ অধিকার পরিষদের শামসুজ্জামান সিদ্দিকী মামুন প্রমুখ। এছাড়াও আন্দোলনে আহত ও তাদের পরিবারের সদস্য, শহিদ পরিবারের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এ স্মরণসভায় অংশ নেন। শেষে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।