তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)►
তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার ইউনিয়নের উজানে গত এক সপ্তাহ দিন ধরে ব্যাপক হারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কাপাসিয়ার পুটমারি গ্রামে অসময়ে নদী ভাঙনের কারণে চরের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কখন তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হবে তা নিয়ে দিশেহারা চরবাসী।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রফিকুল ইসলামের ভাষ্য গোটা বছর নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাবে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ সম্ভাব হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করার দাবি তার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে প্রতিবছর গড়ে ৪৫০ বসতভিটা, ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠান তিস্তায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে। সে মোতাবেক গত ৫ বছরে আড়াই হাজার বসতভিটা, এক হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি, ৫০ কিলোমিটার রাস্তাঘাট, ৩০টি ধর্মীয় ও ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ভাঙন কবলিত পরিবারের জন্য ত্রান বিতরণ করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
হরিপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর গ্রামের মো. জরিফ মিয়া বলেন চরের প্রতিটি মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে ৫ হতে ৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে সারা বছর নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রক্ষা করা সম্ভাব হচ্ছে না।
উজানের পলি জমে নদী ভরে গিয়ে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারনে তিস্তা অসংখ্য শাখা নদীতে রুপ দিয়েছে বলেন হরিপুরের কাশিম বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ.ব.ম. আব্দুল ওয়াহেদ সরকার। তার ভাষ্য, যার জন্য সময় এবং অসময়ে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করতে না পারলে চরের মানুষের কষ্ট কোন দিন দুর হবে না।
পানি কমলে উজানে আর পানি বাড়লে ভাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে উজানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘদিন হতে বিভিন্ন সংগ্রাম পরিষদ, এনজিও সংস্থা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি কাজ করলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকার বলেন কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া। তার ভাষ্য নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর কষ্টের সীমা নেই। তার ইউনিয়নের সবগুলো ওয়ার্ড নদীর চরে। চরের একটি পরিবার বছরে ৪ হতে ৫ বার নদী ভাঙনের কবলে পরে থাকেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরী হয়ে পরেছে।
নদী খনন, ড্রেজিং, সংরক্ষণ, মেরামত এবং শাসন ছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধ করা সম্ভাব নয়। নদী খনন ও ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ একমুখি করলে নদী ভাঙন কমে যাবে বলেন কাপাশিয়া ইউনিয়নের তিনবারের সফল চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক উপজেলা সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম। তার ভাষ্য ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও টিউব ও জিও ব্যাগ এখন কোন কাজে আসছে না। চরের মানুষের হা-হাকার দুর করতে হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের ওপর মহলের নিকট জোর দাবি জানান। তা না হলে এই উপজেলার মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যাবে।
তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে একটি সম্ভাবনাময় জোন। ধান, গম, ভূট্টা, বাদাম, কুমড়া, তরমুজ, আলু, মরিচ, পিয়াজসহ নানাবিধ ফসল চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে তিস্তার বালু চর। কিন্তু প্রতিবছরের ভাঙন চরের কৃষকদের স্বপ্ন নষ্ট করে দিচ্ছে বলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবির। তার ভাষ্য প্রতিবছর ভাঙনে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে বাঙন রোধের ব্যবস্থা করলে চরের কৃষকরা দারুনভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিয়ার রহমান বলেন তিনি সবেমাত্র এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। এখন পর্যন্ত এই উপজেলা সর্ম্পকে তার কোন ধারনা নাই। তবে তিনি জেনেছেন এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত। প্রতিবছর নদী ভাঙনে প্রায় ৪০০ বসতভিটা এবং ৩০০ হেক্টর জমি, রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে থাকে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধ সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার। এখানে তাদের করার কিছুই নাই। নদীভাঙন দেখা দিলে জিও টিউব, জিও ব্যাগ ফেলা এবং সরকারের ওপর মহলে তথ্য প্রদান ছাড়া আর কোন কাজ নেই তাদের। তার ভাষ্য, নদী খনন, ড্রেজিং , শাসন এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা ছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধ সম্ভাব নয়।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. নাজির হোসেন বলেন, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। তবে স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ এখন চরবাসির সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।