Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৭ ঘন্টা আগে
  • ৩২ বার দেখা হয়েছে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বছরপূর্তি আজ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বছরপূর্তি আজ

মাধুকর ডেস্ক►

আজ জুলাই মাসের ১ তারিখ। মাসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক, যা গত জুলাইয়ের আগেও ছিল না। কারণ, জুলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব। যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের। গত বছরের আজকের এই দিনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে এক উত্তপ্ত জুলাইয়ের গল্প। তবে জুলাই-২০২৫ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার কাছে স্বাধীন, নতুন বাংলাদেশের নাম। স্বাধীনচেতা বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মের কাছে যে জুলাইয়ের অপেক্ষা ছিল গত ১৫ বছরের। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের শুরু হয়েছিল এই জুলাইয়ে। অকুতোভয় ছাত্র-জনতা, শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স সব ভেদাভেদ মুছে দিয়ে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধ নাড়িয়ে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের ভিত্তিমূল। তাই আজকের এই জুলাই একটি নতুন সূর্য, ভিন্ন এক জুলাইয়ের গল্প। যে জুলাই আর কখনোই আসেনি।

যদিও অভ্যুত্থানের শুরুতে সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়নি। ছিল শুধু দেশ থেকে বৈষম্য দূর করার আন্দোলন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধে গত বছরের এই জুলাইয়ে। পরে এ জুলাই মাসেই রংপুরের তরুণ প্রাণ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। বিরলতম সেই আত্মত্যাগে বিজয়ী হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, জনজোয়ারে ভেসে যায় ক্ষমতার দম্ভ। সৃষ্টি হয় নতুন এক বাংলাদেশের।

জুলাই অভ্যুত্থানের গভীরে যাওয়ার আগে যেতে হবে জুন মাসে। ঘটনার শুরুটা ছিল ২০২৪ সালের ৫ জুন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবার বহাল হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন ছাত্ররা। সেদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে উচ্চারিত হয় স্লোগান—‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা।’

১ জুলাই সামনে আসে যে নাম- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই ব্যানারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে জড়ো হন। সেখান থেকে ২০১৮ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে হবে দাবি জানানো হয়। দাবি না মানা হলে ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম।

১১ জুলাই পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরদার হয়। এদিন হাইকোর্ট জানান, সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে। এরপরও আন্দোলন-অবরোধের তীব্রতা বাড়তেই থাকে। সরকারের আহ্বান উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ ঘটে। রক্তাক্ত হয় অনেক শিক্ষার্থী।

এতে গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপে ঘি ঢালেন তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি লেলিয়ে দেন ছাত্রলীগকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এরপরও সরকার চাইলে আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পারত।

তা না করে ঘটে সরকারিবাহিনীর হাতে ঘটে হত্যাকাণ্ড। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেন সাধারণ জনতাও।

আন্দোলন চলে ৫ আগস্ট পর্যন্ত, এই সময়কে ‘জুলাই ৩৬’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব দিয়ে ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালিয়ে গেছে হাসিনা সরকার। জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, জুলাই অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠনের মতে শহীদের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এতো রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট সফল হয় ছাত্র-জনতা। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে হেলিকপ্টারযোগে দেশ ছেড়ে ভারতে পালান শেখ হাসিনা। তার পালানোর খবরে গা-ঢাকা দেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ বহু নেতারা। হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জুলাই শহীদদের স্মরণ, পোস্টারিং, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, গ্রাফিতি, সব জেলায় জুলাই স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, আলোচনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি। ৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনউ অভিমুখে বিজয় মিছিলসহ আরও কিছু আয়োজনের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে। ১ জুলাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা, খুনিদের বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর শুরু ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি চালু।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশের সব জেলায় জুলাই পদযাত্রা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা”। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে। এই সময়ে আমরা শহীদ পরিবারদের কাছে যাব। তাদের কবর জিয়ারত করব। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা একসঙ্গে এই পদযাত্রা করবে।’

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ব্যাপক পরিসরে পালন করবে বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। দল থেকে জানানো হয়- বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অংকন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকারবিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণ করবে বিএনপি। বিএনপি ঘোষিক কর্মসূচি হলো— ১ জুলাই বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ১ জুলাই : কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার- (২০১৮-২০২৪) শীর্ষক আলোচনা সভা করবে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের স্মৃতি ধারণ, গণহত্যার বিচার নিশ্চিতকরণ, জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে সততা ও দক্ষতায় প্রজন্ম গড়ার প্রতিজ্ঞায় ‘জুলাই জাগরণ নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

শিবিরের ঘোষিত কর্মসূচি হলো—সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রিসার্চ কনফারেন্স, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন, শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়, শাখাভিত্তিক জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে ‘জুলাই দ্রোহ’ শিরোনামে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ‘জুলাই জাগরণ নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী এবং কালচারাল ফেস্ট আয়োজন, জুলাই গ্রাফিতি অংকন, জুলাইয়ের গল্প ও স্মৃতি বলা, স্মৃতিলিখন, বক্তব্য, রচনা, বিতর্ক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতি আয়োজন, শহীদদের নামে লাইব্রেরি/পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, শহীদ পরিবার, আহত ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গাজীদের নিয়ে ‘ত্যাগীদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও পডকাস্টের আয়োজন, জুলাইয়ের ওপর সাহিত্য সাময়িকী ও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জুলাই স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান ও জুলাই প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও প্রদর্শনী এবং ৩৬ দিনব্যাপী অনলাইন ক্যাম্পেইন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, গুম খুনের বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন দাবিতে ৩৬ দিন ধরেই নানাভাবে স্মরণ ও উদ্যাপন করার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক এই প্ল্যাটফর্মটি। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী গণসংযোগ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad