Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৬ ঘন্টা আগে
  • ৩১ বার দেখা হয়েছে

ভরতখালী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মমতা প্রকল্প’ বন্ধের খবরে দুশ্চিন্তায় চরাঞ্চলের প্রসূতিরা

ভরতখালী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মমতা প্রকল্প’ বন্ধের খবরে দুশ্চিন্তায় চরাঞ্চলের প্রসূতিরা

মোস্তাফিজুর রহমান, সাঘাটা►

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিচালিত ‘মমতা’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আশেপাশের চরাঞ্চলসহ ৬টি ইউনিয়নের হাজারো প্রসূতি। সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

২০২১ সালের মে মাসে সেভ দ্য চিলড্রেন এর অর্থায়নে এবং এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে এই কেন্দ্রে মমতা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রটিতে নরমাল ডেলিভারি সেবাও চালু হয়। নিয়মিতভাবে গর্ভবতী মায়েদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা (ANC), প্রসব-পরবর্তী সেবা (PNC), এবং নিরাপদ প্রসবের সুবিধা প্রদান করে আসছিল কেন্দ্রটি।

জানা যায়, প্রতি মাসে এখানে গড়ে ৩১৬ জন গর্ভবতী নারী ANC সেবা নিচ্ছেন, ১৭৪ জন পাচ্ছেন PNC সেবা এবং গড়ে ৩৫টি ডেলিভারি পরিচালিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এখানে মোট ৭২টি সফল নরমাল ডেলিভারির নজির রয়েছে। ২০২৫ সালে মমতা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত সারাদেশের নরমাল ডেলিভারি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এ কেন্দ্রটির অবস্থান ছিল ৭০তম।

সাঘাটার ভরতখালী ছাড়াও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল—ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি ইউনিয়ন এবং সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর, সাঘাটা, পদুমশহর ইউনিয়নের অসংখ্য মা ও শিশু এই কেন্দ্রে সেবা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন।

কিন্তু সম্প্রতি জানানো হয়, ৩০ জুন থেকে মমতা প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে হতাশা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সেবা নিতে আসা নারী ও তাঁদের পরিবার।

ফুলছড়ির গজারিয়া ইউনিয়নের বাইংকা চর থেকে আসা গর্ভবতী নারী সপ্না বেগম জানান, "এখানে আসলেই ভালো সেবা পাওয়া যেতো। এখন বন্ধ হয়ে গেলে কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে যাওয়া আমাদের মতো চরবাসীর জন্য খুবই কষ্টকর।"

গজারিয়া আদর্শ গ্রামের গর্ভবতী নারী সিমা আক্তার জানান, আমরা গরিব মানুষ সেবা নিতে গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি যেতে পারিনা অনেক দুরে বলে। এই ভরতখালী মমতা প্রকল্পের কেন্দ্রটি একমাত্র ভরসা ছিলো, এটি বন্ধ হয়ে গেলে নরমাল ডেলিভারি ও গর্ভবতী কালীন সেবার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট হবে।

ভরতখালী ইউনিয়নের গর্ভবতী কালীন সেবা নিতে আসা শ্রাবণী আক্তার ও আধুরি আক্তার জানান, বর্তমানে সিজারের যুগে একমাত্র এই কেন্দ্র নরমাল ডেলিভারি নজির ছিলো কিন্তু এই মমতা প্রকল্পটি বন্ধের কথা শুনে আমরা হতাশায় পরে গেলাম, পরবর্তী সেবা কোথায় নিবো কিছু বুঝতে পারছিনা।

কেন্দ্রীটির পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা ফরিদা পারভীন জানান, আমরা খুব শুনামের সাথে এই মমতা প্রকল্পের মাধ্যমে ভরতখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে  নরমাল ডেলিভারি করে আসছিলাম, তবে ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে বিশেষ করে এই অঞ্চলের মানুষ গুলো বিপাকে পরবে। কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলে মানুষের কথা বিবেচনা করে যেন পুনরায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সেবা অব্যাহত রাখে।

এ বিষয়ে এসকেএস ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম খন্দকার জাহিদ সারোয়ার (সোহেল) জানান, আমরা চাই যে মমতা প্রকল্পটা চলমান থাকুক, কিন্তু প্রকল্পের একটা সময় সীমা থাকে। প্রকল্পের মাধ্যমে চাহিদা দেখে সেটা চলমান করার জন্য সরকারের দৃষ্টি গোচর করে থাকি। কিন্তু কেন্দ্রটিতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকবল সংকট, প্রকল্পের মেয়াদ ও দাতা সংস্থা আর্থিক সাহায্য না থাকায় কার্যক্রমটি বন্ধ হচ্ছে। যদি আমাদের স্থানীয় সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা বা জেলা পরিষদ সাহায্য করে তাহলে কেন্দ্রটিতে মমতা প্রকল্পের সেবাটি অন্য ভাবে সচল করা সম্ভব।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিষয়। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।”

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবাগ্রহীতারা বলছেন, এ ধরনের একটি সফল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া মোটেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad