শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
জোরপূর্বক জমি কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদের জেরে সংঘবদ্ধ হয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙ্চুর, মারপিট করে টাকা ও অলঙ্কার লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে প্রতিপক্ষরা। সেইসাথে অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে উল্টো মামলা করতে নিজেরাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলেও অভিযোগ মিলেছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের তোফায়েলের মোড় জোলাপাড়ার এই ঘটনায় একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধাসহ ৫ জন আহত হয়েছে। একটি নবজাতক শিশুসহ তার মা অল্পের জন্য রক্তাক্ত জখম হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
প্রকাশ্য দিনের বেলায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে চরম আতঙ্ক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাউকেই আটক করেনি। ফলে আবারও বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উভয়পক্ষই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কিছু দিন থেকে এলাকার মৃত আব্বাস উদ্দিনের ছেলে আবু তালেবের পৈত্রিক ভিটায় বাড়ির পিছনে এক শতক জমি পাওয়ার দাবী করছেন প্রতিবেশী আজগার আলীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও এমদাদুল ইসলাম। সেমতে তারা জোরপূর্বক ওই জমিটুকু দখল করতে বার বার অপচেষ্টা চালায়। এতে বাধা দেয়ায় বিরোধের সৃষ্টি।
আবু তালেব বলেন, তাদের দাবী সঠিক নয়। আমার বাবা জীবিত থাকাকালে তারা এই দাবী জানায়নি। প্রকৃতই যদি জমি পায়, তাহলে তারা কাগজ দেখিয়ে আইনগতভাবে চাইতে পারতো। তা না করে তারা আমাদের বাউন্ডারি ওয়াল ঘেষে টিউবওয়েলের পানি ফেলছে। জোর করে দখলের চেষ্টা করছে।
প্রায়ই পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে উল্টো মামলা করে হয়রানী করছে।ইতোপূর্বে তারা মারামারি, ছিনতাই, ধর্ষণের মত মামলা করেছে। যেগুলো সব মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমরাই রায় পেয়েছি। তারপরও তারা অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকেও তারা দেশীয় অস্ত্র লাঠি সোটা নিয়ে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে।
আবু তালেবের ভাতিজা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা পরিবারের পুরুষরাসহ প্রায় সবাই চাকুরী ও ব্যবসার সুবাদে দিনের বেলা বাড়ির বাইরে থাকি। শুধু আমার বৃদ্ধা বিধবা দাদী সখিনা বেগম (৬২), চাচী লাইজু বেগম (৩৫) এবং ছোট ভাই আঃ সালামের স্ত্রী নাসরিন (২২) নবজাতক শিশুসহ বাড়িতে ছিল। পূর্বের মত আজও তারা এই সুযোগে সদলবলে হামলা চালিয়েছে।
বাড়ির পিছনের দরজা ভেঙে আঙ্গিনায় ঢুকে হাতের লাঠি, রড ও দা দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাঙ্চুর করে। এতে রান্না ঘরের টিনের বেড়া, শোয়ার ঘরের জানালার থাই গ্লাস ভেঙে ফেলে। পরে ঘরে ঢুকে জাহিদুল ও এমদাদুল আলমিরার দরজা শাবল দিয়ে খুলে আমার ব্যবসার নগদ ২ লাখ টাকা, ১ ভড়ি ওজনের সোনার এক জোরা করে কানের দুল ও হাতের চুড়ি এবং রুপার ২ ভড়ি পায়ের নুপুর লুট করে।
বের হওয়ার সময় টেবিলের উপর থেকে একটি টাচ মোবাইলও নেয় এবং পাশের ঘর থেকে মোটর সাইকেলটি বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তালা দেয়া থাকায় আঙ্গিনায় নিয়ে লুকিং গ্লাস ও মিটারটি ভাঙ্গে। এসময় মোটর সাইকেলের বডির বিভিন্ন স্থানে শক্ত আঘাত করে। এতে রং চটে যাওয়াসহ টেপ পড়েছে।
বাধা দেয়ায় আমার বৃদ্ধা দাদীর উপড় চড়াও হয়ে জাহিদুলের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৩৫) ও এমদাদুলের স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩২) গুরুত্বরভাবে আহত করে। এছাড়াও আজগরের স্ত্রী ক্বলবী বানু (৫০), সেতাব উদ্দিনের ছেলে মোসতাকিম (২২) ও একরামুলের ছেলে ফরিদুল বিভিন্ন ঘরে ঢুকে তছনছ করে।
আর তাদের পরিবারের অন্যান্যরা বড় বড় ইটের টুকরা নিক্ষেপ করে এবং ঘরের পিছনের জানালায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। এতে জানালার এঙ্গেল ও প্লেনসীট ভেঙ্গচে গেছে। ইটের টুকরা আঙ্গিনায়সহ ঘরের ভিতরেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে থাকা আঃ সালামের স্ত্রী নাসরিন ও নবজাতক সন্তান অল্পের জন্য ইটের আঘাত থেকে বেঁচে গেছে।
মৃত আবেদ আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দেখি বাড়ির সব কিছু ছিন্নভিন্ন। দাদী আহত হয়ে বারান্দায় পড়ে আছে। সারা বাড়িতে ইটের টুকরার ছড়াছড়ি। একেবারে লঙ্কাকাণ্ড অবস্থা। অথচ শুনতে পারছি হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাঙ্চুর ও লুট করে উল্টো হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়েছে জাহিদুল গংরা। মামলাও করবে। কিন্তু তারা নিজেদের আঘাতেই আহত হয়েছে তারা। এ যেন মগের মুল্লুক। তবে আমরা তদন্ত পূর্বক সঠিক বিচার চাই।
এব্যাপারে আজগার আলী বলেন, জায়গাটা আমাদের। দলিল ও রেকর্ডও আছে। কিন্তু ওরা দখল করে রেখেছে। গায়ের জোরে আমাদের জমি ছেড়ে দিচ্ছেনা। এমনকি একটু পানিও ফেলতে দেয়না। টাকার দাপটে আমাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। আইনগতভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে হামলা চালিয়েছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরুপায় হয়ে। কারণ আমাদের টিউবওয়েলের পানি ফেলার জায়গা নাই। ওদের লাঠির আঘাতেই আমাদের ৩ জন আহত হয়েছে। এবার মামলা হলেই বুঝবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, জরুরী নাম্বার ৯৯৯ এ কল পেয়ে এস আই পলাশ চন্দ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে তবে কোন পক্ষ থেকেই এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।