শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
নীলফামারীর সৈয়দপুর থানা পুলিশ জান্নাতুল (২৩) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩ টায় শহরের নয়াবাজার আদর্শ বালিকা মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ আত্মহত্যা বললেও জান্নাতুলের বাবা মায়ের দাবী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে। একারনে শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত গৃহবধূ শহরের পুরাতন বাবুপাড়া দারুল উলুম মাদরাসা ধোপামাঠ এলাকার মো. তাহেরের ছেলে জাফর ইকবাল চাঁন ড্রাইভারের তৃতীয় স্ত্রী এবং হাতিখানা মৌয়াগাছ এলাকার মো. ফারুকের বড় মেয়ে।
গৃহবধূর মা মাকসুদা বেগম বলেন, চাঁন একজন লম্পট। চোরাই পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়ী কেনাবেচা করে। সে ইতোপূর্বে তার খালাত বোনকে বিয়ের পর কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপরও যৌতুকের দাবীতে পুরো পরিবার মিলে নির্যাতন করে।
এরই মাঝে সে আমার ভাই শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেলোয়ার তালুকদারের মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এতে প্রথম স্ত্রী বাধ্য হয়ে নিজেই তালাক দিয়ে চলে যায়। এই অবস্থাতেই সে আমার অবুঝ মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালায়।
এভাবে সে একের পর এক মেয়ের জীবন নষ্ট করে চলেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর তিনটা সন্তান। তাকে নয়াবাজার এলাকায় এজাজ লবন ওয়ালার বাসায় ভাড়া রুমে রানীর মত রাখতো। আর আমার মেয়ে দুই বছর হলো শ্বশুর বাড়ীতে বাদীর মত খাটছে।
তবুও যৌতুকের জন্য পুরো পরিবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে চলেছে। আমরা গরীব মানুষ টাকা দিতে পারিনা বলে সব মুখ বুঝে সইতে হয়। গত বুধবারও সবাই মিলে জান্নাতুল কে বেধড়ক মারপিট করেছে। এরপর ওই ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখা হয়েছে। আর আজ তার লাশ পেলাম।
গৃহবধূর বাবা ফারুক হোসেন বলেন, আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে। মেরে ফেলে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে মধ্যরাতে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের খবর দিয়েছে। আত্মহত্যা করে থাকলেও তাঁকে টর্চার করাসহ অবৈধ কাজে বাধ্য করতে চাওয়ায় সে এইপথ বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, চাঁন অবৈধ টাকার গরমে আরও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।তার সাথে মেয়ের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও দেবর সুজনও জড়িত। তারা মামলা না করতে দুই লাখ টাকার লোভ দেখাচ্ছে। আমার বড় ভাই (দ্বিতীয় স্ত্রী সাথীর বাবা) পিডিপি কর্মচারী মান্নান ইলেকট্রেশিয়ানের মাধ্যমে ওই টাকার প্রস্তাব দিয়েছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে চাঁনকে তারা বাঁচাতে চাচ্ছে। কারন এই অপরাধে তিনিও জড়িত। তার পরামর্শেই চাঁনের পরিবার আমার মেয়েকে দুনিয়া থেকে বিদায়ের পরিকল্পনা করেছে। আমরা টাকা চাইনা। তাদের মত লম্পট ও খুনির উপযুক্ত শাস্তি চাই। দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবী করছি।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মফিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ভিতর থেকে লাগানো দরজা ভেঙে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেছিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে।
গলায় ফাঁসের দাগ থাকলেও শারীরিক নির্যাতনের আর কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া হয়ে থাকতে পারে। তাই পরিবারের দাবী অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বামীকে জিজ্ঞেসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।