রমেশ চন্দ্র সরকার ►
অনেক চড়াই উৎরাই ,রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা পটপরিবর্তনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ৫০ বছর পার করেছে। পালিত হয়েছে সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষ । খাদ্য নিরাপত্তা ,জ্বালানি নিরাপত্তা ,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে দেশটির একথা বলা যায়। এতকিছু অগ্রগতির পরেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একি হাল ? তাই বিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় এসেছে।
প্রিয় পাঠক,আজকে কলম ধরলাম এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রসঙ্গে । ৫১ বছর ধরে খুঁড়িয়ে চলা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার হাজারো রুপ। আছে সরকারি বেসরকারির মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যেও বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এখনো সরকারের নজরদারির বাহিরে রয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কিন্ডারগার্টেন,ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কওমি শিক্ষা) । যে যার মতো কারিকুলাম তৈরী করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতো দিন নীতিহীন ছিল। রাষ্ট্রীয় দর্শন ও জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উপায় ও অবলম্বন হলো শিক্ষানীতি। সর্বশেষ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হলে জাতির কংলঙ্ক মোচন হয়।
কিন্তু এই শিক্ষানীতি কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার। যদিও উল্লেখিত শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছিল (২০১০ - ২০১৮) পর্যন্ত। কিন্তু শিক্ষানীতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। পৃথিবীর একাধিক দেশ ঘুরে এটা আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে,আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষে আইসিটির ব্যবহার ও শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে দারুণ অগ্রগতি হলেও একথা বলা বাহুল্য আমাদের শিক্ষকগণ এখনো আর্থিক দৈন্যতায় ভুগছে।
প্রিয় পাঠক,লেখাটি যখন লিখতে শুরু করি, তখন দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩০,৫৪০টি এবং কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষাধিক। এর বাইরেও রয়েছে কয়েক হাজার ননএমপিওভক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । মোর্দ্দা কথায় শিক্ষা ব্যবস্থার বিরাট একটি অংশকে জাতীয়করণের বাহিরে রেখে শিক্ষার গুণগত মান কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা আমার বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রাণের দাবিটি উপেক্ষিত হোক এটা কারো কাম্য নয়।
মুজিব শতবর্ষ উদযাপনকে ঘিরে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক যোগে জাতীয়করণে শিক্ষকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে তা চাপা পরে যায়। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর দরবারে শিক্ষক সংগঠনগুলো তাদের আরজি পেশ করছে। আবেদনে বলা হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরা দীর্ঘদিন থেকে বেতন-বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘ ১৬ বছরেও ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাসের পরিবর্তন নেই। ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ২০১৬ সাল থেকে টাইম স্কেলের পরিবর্তে উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬ বছরেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা নেই, নেই কোনো বদলি প্রথা। এছাড়া এমপিওভুক্তির শর্ত শিথিল করে আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনা।
দেশে অনেক মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রভাব ফেলে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা তথা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করলে সমগ্র জাতির উপর প্রভাব ফেলবে বৈকি। একথা সত্য যে,আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, শিক্ষায় সহায়তা বাড়ানো হয়েছে (বৃত্তি, উপবৃত্তি, খাদ্য প্রদান , বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, অবৈতনিক শিক্ষা) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে ও বার্ষিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলেও সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো জাতীয়করণের আওতার বাহিরে। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে বর্তমান সরকারের যে প্রচেষ্টা তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সবার জন্য সুখকর হবে। এ কথা বলা যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবী ।
লেখকঃ (শিক্ষক ও সাংবাদিক ) মোবাঃ ০১৭২৪-৪২৫৮৮৮