ভবতোষ রায় মনা ও আসাদ খন্দকার ►
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে গত ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন। অনিয়মের কারণগুলো অনুসন্ধানে নির্বাচন কমিশন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। দ্বিতীয় দিনে এই তদন্ত টিম সাঘাটা উপজেলার মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ ৫২২ জনকে শুনানির আওতায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের অনিয়ম খতিয়ে দেখেন তারা।
এই তদন্ত কমিটিতে যারা রয়েছেন তারা হচ্ছেন আহবায়ক নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও যুগ্ম সচিব সাহেদুন্নবী চৌধুরী। তাদের সাথে উপস্থিত রয়েছেন আইডিএ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোত্তালিব।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মিলনায়তন এবং সাঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসে পৃথক পৃথকভাবে তারা একযোগে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তারা এদিন সাঘাটা উপজেলার ৪০টি ভোট কেন্দ্রের ৪০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ২৭৮জন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার, ১০৬ জন পোলিং এজেন্ট এবং কর্মকতা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে ভোটের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলেন। তারা ভোটের দিনের পরিস্থিতি অবগত হন। সংশ্লিষ্ট ভোট গ্রহণকারি কর্মকর্তারা সেদিনের ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন।
দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মোট ৫২২ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে ৪০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১০৬ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
বুধবার দ্বিতীয় দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, আজ ৪০ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ও সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বক্তব্য এ পর্যন্ত নিয়েছি। এখনও আমাদের কার্যক্রম শেষ হয়নি।
প্রিসাইডিং ও সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সামনে ভিডিও উপস্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তারাও আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রিসাইডিং ও সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নিজের ইচ্ছে মত সেদিনের ঘটনা লিখে দিচ্ছেন ও বক্তব্য দিচ্ছেন। এখানে তাদের ওপর কোন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তিন দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা জানান তিনি।
অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন ভোট বন্ধ করে দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ঢাকার নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করে একে একে ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে ইসি। পরে ভোট স্থগিত করে দেয় ইসি।
এমন অবস্থায় ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই শুনানির জন্য আদেশ জারি করে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি। মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ অনেকেই রয়েছেন এই শুনানির তালিকায়।
তদন্ত কার্যক্রমের শেষ দিন বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজিবি ও র্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুইজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই উপ-নির্বাচনের শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপ-নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল।
সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।