তিস্তা আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ►
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাকে সংযুক্ত করা তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতু গত ২০ আগস্ট উদ্বোধন করা হয়। সেতুর দুই পাশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী সরিয়ে নেওয়া হয় সেদিন সন্ধ্যায়। এরপর কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
উদ্বোধনের পরই ল্যাম্পপোস্টের ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে যায়। গত রবিবার চুরি হয় সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট। ওইদিন রাতে অন্ধকার সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন দুই যুবক হাদিয়া জামান ও মোকছেদুল ইসলাম। এটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সেতু উদ্বোধন হলেও এটির ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ এখনও বাকি। সংযোগ সড়কের কাজও চলছে। সেতুটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। জেনারেটরের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বৈদ্যুতিক তার চুরির পর সেতু অন্ধকারে ডুবে আছে। ফলে সেতু পারাপারে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশল উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়টি তিনি সামাজিক মাধ্যমে জেনেছেন। স্থানীয় পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বিদ্যুৎ সংযোগের তার চুরির বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ নুর আলম বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে মামলা করেছেন। দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে। চুরি হওয়া তারের মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবার আলী বলেন, দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে গাড়িগুলো বেপরোয়া গতিতে চলছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। সেতুটি অন্ধকারে ডুবে থাকে। নিরাপত্তাকর্মী নেই। এ কারণে বৈদ্যুতিক তার ও রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে।
উপজেলার পাঁচপীর বাজারের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসএএসএর নির্বাহী পরিচালক এ বি এম নূরুল আকতার মজনু বলেন, সেতুর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি বড় প্রকল্পে কীভাবে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি?
স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটিকে দ্রুত পূর্ণ নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে। চুরির ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সেতু ও আশপাশে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সার্বক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীর টহল নিশ্চিতকরণ, বেপরোয়া যান নিয়ন্ত্রণে স্পিড ব্রেকার ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসানো এবং চুরি-ছিনতাই রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ।
হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গাইবান্ধা জেলা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট নাফিউল ইসলাম জিমি বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সেতুর কাজ হয়েছে। তখন কিছু চুরি হয়নি। এখন কেন হচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ এই মুহূ্র্তে সেতু থেকে নিরাপত্তাকর্মী সরিয়ে নিয়ে ঠিক কাজ করেনি। যেহেতু ২০২৬ সালের জনু মাস পর্যন্ত কাজ চলমান, তাই নিরাপত্তাকর্মী রাখা প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, উদ্বোধনের পর সেতুর দুই পাশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী সরিয়ে নিয়েছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, বৈদ্যুতিক তার চুরির মামলা তদন্তাধীন। তা ছাড়া সেতু এলাকায় প্রতিদিন পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।
১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের ভাসানী সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে এলজিইডির বাস্তবায়নে
সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুতে ৩১টি স্প্যান রয়েছে। সংযোগ সড়ক, নদীশাসনসহ প্রকল্পে প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক করা হয়েছে ৮৬ কিলোমিটার।