• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-৩-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৮:৪৫
  • ১৭৪ বার দেখা হয়েছে

সেবাবঞ্চিত চরের মানুষ জঙ্গলে ভরে গেছে ক্লিনিক

সেবাবঞ্চিত চরের মানুষ জঙ্গলে ভরে গেছে ক্লিনিক

ভবতোষ রায় মনা ►

চরের মানুষের জন্য ২০১৬ সালে নির্মিত হয় একটি পাকা কমিউনিটি ক্লিনিক। ২০১৭ সালে একজন স্বাস্থ্যকর্মী (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) নিয়োগ দেওয়া হলেও অন্য একটি চাকরি পাওয়ায় জহুরুল ইসলাম কমিউনিটি কিনিকের চাকরি ছেড়ে দেন। তার পর থেকেই বন্ধ হয়ে আছে এ ক্লিনিকটি। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে ভেতরের আসবাবপত্র। জঙ্গলে ভরে গেছে কিনিক প্রাঙ্গণ। গ্রামবাসীরা দিনের বেলাও সেখানে উঁকি দিতে ভয় পান বলেই স্থানীয়রা ক্লিনিকটির নাম দিয়েছেন 'ভুতের বাড়ি'।

ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীর ওপারের দুর্গম একটি চরের নাম দেলুয়াবাড়ী। উপজেলা শহর থেকে ওই চরের দূরত্ব ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্ষা মৌসুমে স্যালোইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাতায়াত করা গেলেও শুকনো মৌসুমে পড়তে হয় বিপাকে। কখনও পায়ে হেঁটে আবার কখনও বা ঘোড়ার গাড়িতে করে। ফুলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব দেলুয়াবাড়ী, মধ্য দেলুয়াবাড়ী, পশ্চিম দেলুয়াবাড়ী, জামিরা, ঘরভাঙা, বাঘবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম মিলে এই চরে বাস করেন প্রায় ১১-১২ হাজার মানুষ। 

স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায় ৬ বছর ধরে বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এসব চরের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৬ সালে এই চরে একটি পাকা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার একবছর পর থেকে নেই কোনো স্বাস্থ্যকর্মী (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার)। যে কারণে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্গম চর পাড়ি দিয়ে সামান্য চিকিৎসা নিতে যেতে হয় উপজেলা বা জেলা সদরে।

পূর্ব দেলুয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা জাবেদা বেগম (৬৫) বলেন, 'ক্লিনিকটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন একজন স্বাস্থ্যকর্মী এসেছিলেন এখানে। ঘরের মেঝে নাকি কাঁপে, এই ভয়ে তিনি আর আসেননি। এরপর থেকেই ক্লিনিকটি ভুতের বাড়ি নাম পরিচিতি পায়। ক্লিনিকটি রাস্তার সঙ্গে হলেও দিনের বেলায় কেউ আর উঁকি দেয় না।'

চরের আরেক নারী জহুরা খাতুন বলেন, একটা করি মায়া বড়ির পাতা ৫০ টাকা। হামরা গরিব মানুষ নয়, কয়দিন কিনি খামো। যদি এই ক্লিনিকটা চালু থাকলো হয় তাহলে তো বিনামুল্যে এগুলা পালাম হয়। বাঘবাড়ী গ্রামের আফছার মোল্লা জানান, এ গ্রামে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী আসেন না। শুধু মাসে একবার স্বাস্থ্য সহকারীরা আসেন বাচ্চাদের টিকা দিতে। বাড়ির মহিলাদের কোন অসুক-বিসুক হলে ফুলছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা গাইবান্ধা না নিলে কোন চিকিৎসা মেলে না।

নারীমুক্তি কেন্দ্র’র সভাপতি অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন বলেন, সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে পৌঁছায় না স্বাস্থ্য কর্মীদের কারণে। তারা মাঠ পর্যায়ে না যাওয়ার কারণেই সরকারের এ উদ্যোগ বেস্তে যেতে চলেছে। এজন্য নারী নেত্রী দায়ী করলেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের । 

ফুলছড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওমর আলী বলেন, 'দেলুয়াবাড়ী চরের বয়স প্রায় ৪০ বছর। শুরু থেকেই কিনিকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ফলে এই গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার ভোটার এবং ১০ হাজার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসাও ঠিকঠাক পাচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের শহরে যেতে হয়।'

ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল মন্ডল হান্নান বলেন, 'এই চরের কোনো অন্তঃস্বত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নিতে হলে খুব বিপদে পড়তে হয় আমাদের এলাকার মানুষের। শুকনো মৌসুমে রাস্তা-ঘাট এবং যানবাহন না থাকায় প্রথমে জলচৌকিতে করে ৩ কিলোমিটার হেঁটে নৌকা ঘাটে নিয়ে নদী পার হয়ে তারপর অন্য কোনো যানবাহনে হাসপাতালে নিতে হয়। এতে অনেকের মৃত্যুও ঘটে। 

ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুজ্জামানের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার জানা মতে দেলুয়াবাড়ী ক্লিনিকটি ২০১৬ সালে নির্মিত হয়েছে। ক্লিনিকটিতে বর্তমানে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী (সিএইচসিপি) নেই। ২০১৭ সালে একজন স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি আমাদের চাকরি ছেড়ে দেন। 'দেলুয়াবাড়ী ক্লিনিকটি ভেঙে পুননির্মাণ করা হবে। 

উপজেলায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। তার মধ্যে ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে লোকবল আছে। দেলুয়াবাড়ী, গলনা, সিংড়িয়া ও এরেন্ডবাড়িসহ চারটি ক্লিনিক মেরামত করে অতিদ্রুত লোকবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করা হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়