পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি ►
রংপুরের পীরগঞ্জে“স্কুল-কলেজের সভাপতি পদে শিক্ষক নয়” মহামান্য হাইকোর্টের এই রায়কে উপেক্ষা করা হচ্ছে কলেজ স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ কলেজ,স্কুল ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রধান ও কর্মরত শিক্ষক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে দায়িত্বরত রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের সদস্য থাকার সুবাদে এঁরা ওই পদে আসীন হবার সুযোগ পেয়েছেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগন একাই একাধিক প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে একাই ২টির বেশি প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না মর্মে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি একাই ৪টি প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে রয়েছেন। উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অথচ কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
এ ধরনের নজীরও রয়েছে পীরগঞ্জে। বিদ্যালয়ের চৌহদ্দীতে পা দেননি কোন দিন, একেবারে ব কলম। এ ধরণের ব্যক্তিও উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি রয়েছেন। শিক্ষা বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসন এসব অবগত হওয়া সত্বেও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্ত নানাভাবে তাদের সহযোগিতা করেছেন।
স্মরনযোগ্য যে, বিগত ২০১৮ইং সালের ১৮ মে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) কোনো শিক্ষক সভাপতি পদে নির্বাচিত বা মনোনীত হতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুলকে যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়,গ াইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ঝিনিয়া এম এ হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এ বি এম আনিছুর রহমান। যিনি একই উপজেলার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তার সভাপতি পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. বাদশা মিয়া। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৮ সালে ১৫ অক্টোবর ওই শিক্ষকের সভাপতি পদে থাকার বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেন আদালত। উক্ত রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধান মালা, ২০০৯ এর ৭(২) এ বলা আছে, কোনো শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে নির্বাচিত বা মনোনীত হতে পারবেন না। এ কারণে আদালত কোনো শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে নির্বাচিত বা মনোনীত হতে পারবেন না বলে আদালত রায় দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, উপজেলার অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে ক্ষতাসীন দলের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করেছন। বিশেষ করে যে সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বা শুন্যপদ রয়েছে, সেগুলোতে সভাপতি হবার জন্য বেশি আগ্রহী। যে কোন উপায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে আঁতাত করে রাতারাতি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়। যাতে করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মনোনীত এসব ব্যক্তি সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারেন। কোন প্রতিষ্ঠানে বাবা সভাপতি কোন প্রতিষ্ঠানে স্ত্রী অথবা নিজস্ব কাউকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করে নিজের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, কমিটি পাশ করে মন্ত্রনালয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায় বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে”। এদিকে এসব ছাড়াও নানাবিধ কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশ এলাকায় সংশ্লিষ্ট অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা এ ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবি জানিয়েছেন।