ভবতোষ রায় মনা►
শহরে এসি সেলুন, ‘জেন্টস পার্লার’ মফস্বলের ছোট-বড় শহরেও গ্লাসে মোড়ানো উন্নতমানের সেলুনের ছড়াছড়ি। এসব সেলুনে বসেই মানুষজন চুল-দাড়ি কাটছে, তখনই ভিন্ন চিত্র দেখা যায় গাইবান্ধর চরাঞ্চলে। এখানকার মানুষজন আধুনিক যুগে এখনও পিঁড়িতে বা টুলে বসে চুল-দাড়ি কাটেন। বিশেষ করে স্বল্প খরচের কথা মাথায় রেখে নিম্নআয়ের মানুষ এসব জায়গায় চুল-দাড়ি কাটিয়ে নেয়।
দেশের উত্তর প্রান্তের জনপদের বিভিন্ন হাটে-বাজারে এখনো চোখে পড়ে পিঁড়ি বা টুলে বসে চুল-দাড়ি কাটানোর দৃশ্য। মফস্বল শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে টিকে আছে এই পথেঘাটের সেলুনগুলো। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডবাড়ির আলগারচর হাটে প্লাটিক অথবা কাঠের তৈরি টুলে খদ্দেরকে বসিয়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নরসুন্দর। শিশুদের মাথা অনেক সময় দুই হাঁটুর মাঝে চেপে ধরে চলত কাঁচি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক পেশার মতোই নরসুন্দরের এই পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তারপরও কখনও কখনও গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলের হাটবাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের কর্মযজ্ঞ। ভ্রাম্যমাণ এসব নরসুন্দর চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন গ্রামীণ ও চরাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে। হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারাই নরসুন্দরদের ‘কাস্টমার’।
ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডবাড়ি ইউনিয়নের আলগারচর বাজারের নরসুন্দর মগবুল হোসেন বলেন, ৪০ বছর হলো এই কাজ করি, গবীর মানুষ মাটিতে বসেই কাজ করি। এখন সেলুন হয়া গেছে বহুত। সেলুসে সেলুনে ধনি ধনি মানুষ কাজ করে, আমরা গবীর মানুষ, যাদের কম পয়সা আছে তারা আমগরে কাছে আসে, তাদের আমরা কাজ করি।
একই এলাকার নাপিত বাদশা মিয়া জানান, ১৫-২০ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটার পারিশ্রমিক ছিল চার-পাঁচ টাকা। সে সময় যে আয় হতো তা দিয়েই সংসার ভালো চলত। এখন চুল কাটতে ১৫ টাকা, ন্যাড়া করতে ১০ টাকা এবং দাঁড়ি কাটতে ১০ টাকা নেন। তবে আগের তুলনায় খদ্দের কম পান। দিনে ২০০-৩০০ টাকা উপার্জন হয়, যা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান।
টুলে বসে চুল দাড়ি কাটতে আসা আজগর মিয়া বলেন, সেলুনে নাগে ৫০ টাকা, এখানে আসলে নাগে ১০ টাকা। এখানে বাপদার আমল থেকে আমরা টুলেই কাটি ১০ টাকা। শুধু আমি না এ গ্রামের সবাই এভাবেই চুল দাড়ি কাটেন হাট-বাজারে এসে। নরসুন্দররা বাড়িতে বাড়িতে যেয়েও চুল দাড়ি কেটে দেন।
এ প্রসঙ্গে এরেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য চরের হাট-বাজারগুলোতেই চোখে পড়ে। তবে ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এসব জায়গায় চুল কাটাতে যেতাম। বর্তমানে প্রায় সবাই আধুনিক সেলুনেই চুল কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখনো গ্রামের হাটে-বাজারে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য কিছু দেখা গেলেও এমন একটা সময় আসবে যখন এ কথা নতুন প্রজন্মের কাছে গল্পের মতো মনে হবে।’