• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-২-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৪:১৬
  • ১০৩ বার দেখা হয়েছে

অর্কর ভালোবাসায় তিলা ঘুঘুর ছানাটি

অর্কর ভালোবাসায় তিলা ঘুঘুর ছানাটি

কঙ্কন সরকার ►

বাড়িতে ঢুকতেই চিঁউ চিঁউ আওয়াজ কানে পড়লে কৌতূহল পেয়ে বসল! জেনে পরিষ্কার হলো যে, ওটি মুরগীর ছানার আওয়াজ। দশম শ্রেণির ছাত্র অর্ক প্রাইভেট থেকে ফেরার সময় রাস্তায় পেয়েছে। অবশ্য বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি। 

একদিন পর ওটি রাতে ওর খাচায় মরে পড়ে ছিল। তবে অর্ক ওর সেবা শুশ্রুষার কোনো ত্রুটি করেনি। আগের পাওয়া পাখিগুলোর প্রতি যেমন করেছিল ঠিক এর প্রতিও তেমনই করেছিল। দশম শ্রেণির ছাত্র ভাতিজা অর্কর ছোটবেলা থেকেই প্রাণী পাখির প্রতি বিশেষ ভালোবাসা ওর। এ জীবনে কত পাখির যে যতœ করেছে সে! তবে সেগুলো কোনো বাসা থেকে ধরে বা পেড়ে বা শিকার করে আনা নয়। বরং বাসা থেকে পড়ে গিয়েছে কিংবা আঘাত পেয়ে পড়ে থাকা বা শিকারী বা কারো খপ্পর থেকে বেঁচে যাওয়া — এমন পাখি ওর হাতে আসে এবং ভালোবাসা সেবাযতœ পেয়ে থাকে। অবশ্য সবগুলোই যে সুস্থ হয়ে আপন নীড়ে যেতে পেরেছে, তা নয়! তবে সেবা যতেœর ত্রুটি ছিল না কোনোটির প্রতিও। সেবাযতেœর মধ্যে প্রয়োজনে ওষুধ পত্র লাগলেও তা প্রয়োগে কোনো কার্পন্য করেনি সে। এইতো কিছুদিন আগে একটা তিলা ঘুঘুর বাচ্চা ওর এক কাজিন কুড়িয়ে পেয়ে ওকে দেয়। সম্ভবত চার পাঁচদিন বয়সী হবে বাচ্চাটি। শুরু হলো যতœআত্তি। খাঁচায় তুলো ও নরম কাপড় দিয়ে তৈরি হলো বাসা। খাবার খাওয়ানো শুরু হলো সময়ে সময়ে। সে যে ঠোঁট দিয়ে খুঁটে খেতে পারে না তাতে কি! অর্ক চাল, খুঁদ, গম পাথরে পিষে গুড়া করে করে খাওয়াতে লাগল ঠোঁটে আঙুলের মাধ্যমে তুলে দিয়ে দিয়ে। ড্রপার দিয়ে পানিও খাওয়ায়। 

এ কাজ যেন চলল তার রুটিন মোতাবেক! ধীরে ধীরে বাচ্চাটি বড় হতে থাকলো। আর পোষও যেন মেনে যাচ্ছিল। ও হাত পাতলে হাতের তলায় ওঠে, কাছে আসে। একসময়ে সে নিজে খুঁটে খুঁটে খেতে শিখল। যেদিন প্রথম খুঁটে খেতে শিখল সেদিন অর্কর চোখে মুখে যে কি আনন্দ বয়ে চলল, তা না দেখলে প্রকাশ করা যাবে না। এভাবে তুলে খাওয়ানো আর খুঁটে খেয়ে খেয়ে একদিন সে পাখা মেলতে চেষ্টা করল। দুএকদিনে সফলও হল। কেননা সে উড়তে পারে! তাইতো যখন খাবারের জন্য খাঁচা থেকে বের করা হয় তখন সে উড়তে চেষ্টা করে। আশে পাশে উড়ে উড়ে পড়ে। এর মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে তা উপভোগ করে অর্ক! 

তবে পাখির সেবা যতেœ কিন্তু সহযোগিতা করে ওর বোন, কাজিন— নিপুণ, পিউ, আরাধ্যা, কাব্য, অর্পণ, অর্থী এমন কি পিচ্চি অমৃতাও। আর বাড়ির লোকদের কাজের মধ্যেও নজর থাকে বাচ্চাটির ওপর। কেননা, বিড়াল, কুকুর এর আগমন প্রস্থান আছে যে! যাহোক, একদিন খাঁচা থেকে বের করলে উড়ে একটা উঁচু গাছের ডালে গিয়ে পড়ল ছানাটি। আয় আয় বলে ডাকলেও এলো না সেসময়। তবে বেশ খানিকক্ষণ পর এলো। এরপর ওমনি করে উড়ে যায় বেশ কিছুক্ষণ কিংবা দিনমান থাকে। 

কোনোদিন রাত পর্যন্ত কোথায় কোথায় থেকে আবারও আসে। এমনি ভাবে চলল কয়েকদিন। তারপর কোনো কোনো দিন আসে, খেয়েদেয়ে আবার চলে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে সে তার যাপিত জীবনে চলে যায় একদিন। যা ওদের প্রকৃতিজাত স্বভাব। কেননা আমরা জানি, 'বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে'। এমন ভাবে দেখেছি বুলবুলি, দোয়েল, বক সহ হরেক পাখিকে সে সেবা দিয়ে এসেছে। তাইতো কোথাও ছোটদের কেউ পাখি বা পাখিছানা পড়ে থাকতে দেখলে, পাখির বাসা কিংবা ডিমও পড়ে আছে দেখলে অর্ককেই সংবাদ দেবে । 

আরেকটি কথা না বললে অপূর্ণতাই থেকে যায়, তাহলো এই ঘুঘু ছানাটি আসার কয়েকদিন পরেই অর্কর কাজিন কাব্য একটা বড় তিলা ঘুঘু নিয়ে আসে। সেটি গাছ থেকে পড়েছে। নড়তে চড়তে পারে না। সেটিরও সেবা চলতে থাকল। তবে তিনদিন সেটি বেঁচে ছিল। ওদেরকে খুবই খারাপ লেগেছিল ঘুঘুটি মারা যাওয়াতে। তেমনই খারাপ লেগেছিল আগে সেবাযতœ করা কোনো পাখি মারা যাওয়াতে। আর বড্ড আনন্দ পায় বা পেত কোনো পাখি সুস্থ হয়ে উঠলে!
লেখক ও সংগঠক। সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়