জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ►
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কন্দাল ফসল মিষ্টি আলুর চাষ। কৃষকের ক্ষেতে ক্ষেতে মিষ্টি আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে, জমি থেকে আলু তুলে সেখানেই বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশি চাহিদা, বাজারে মূল্য বেশি এবং অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ও কচুয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। এই দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবং যমুনা, বাঙ্গালী ও আলাই নদীর চরের বালু যুক্ত জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে বেশি।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম মিলে চলতি মৌসুমে ১৬০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। কৃষকরা প্রতি শতক জমিতে তিন থেকে চার মণ আলু উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি মণ আলু ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন মিষ্টি আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
আগে আলাই নদীরর বালু চরের জমিগুলোতে কোনো আবাদ হতো না সারা বছর পড়ে থাকতো। উপজেলা কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের পরামর্শ এবং অফিস থেকে মিষ্টি আলুর কাটিং, সার, চাষসহ যাবতীয় খরচ নিয়ে গত বছর থেকে উপজেলার কৃষকরা আলু চাষ শুরু করেছে। বিশেষ করে উপজেলার কচুয়া, চন্দপাঠ, রামনগর, হলদিয়া, কানাইপাড়া, গোবিন্দপুর, নলছিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষ হয়েছে।
বোনারপাড়া এলাকার কৃষক জাহিদ খন্দকার বলেন, গতবছর ২ বিঘা বালু জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছিলাম। এতে নিজের কোনো খরচ হয়নি কৃষি অফিসের খরচে ওই ২ বিঘা জমিতে আবাদ করে ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন, চাষে তার নিজের কোনো খরচ হয়নি। আলুর কাটিং, চাষ, সার, সেচ ও কীটনাশক সব খরচ কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর করেছে। সেখান থেকে প্রায় ৪৫০ মণ থেকে ৫০০ মণ আলু উৎপাদন হবে এমন আশা করছেন কৃষক জাহিদ ।
এছাড়াও মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা জানালেন উপজেলার চন্দনপাঠ গ্রামের কৃষক আনছার আলী, আব্দুল হান্নান, আসান আলী, বারেক ও আব্দুর রহমানসহ আরও অনেকেই। এখন পরিত্যাক্ত জমিগুলো কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জন করা যায়। তাই মিষ্টি আলু আবাদের কৃষকরা ঝুঁকেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান বলেন, কন্দাল ফসল মিষ্টি আলু চাষ লাভজনক এবং জনপ্রিয় হওয়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে আলু তোলা প্রায় শেষের দিকে ফলন খুব ভালো হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু আবাদে সার, সেচসহ অন্যান্য খরচ কম হয় এবং ফসল বেশি পাওয়া যায়। বালু এবং দোঁআশ সহ সব ধরণের মটিতে আলু চাষ করা যায়।
প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ২৭ টন আলু উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি আলুর বাজার মূল্য ১৫/১৬ টাকা। আলু বিক্রির জন্য কৃষককে বাজারে যেতে হয় না, কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর খরচ বাদ দিয়ে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিচ্ছে কৃষকের জমি থেকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ আলু উৎপাদন হয়। এই মিষ্টি আলু উন্নত জাতের এবং অধিক পুষ্টিযুক্ত, মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরনে সহায়ক। একারণে বাংলাদেশের উৎপাদিত এই মিষ্টি আলু জাপান, সিংগাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।