• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৬-৫-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:১৯
  • ৬২ বার দেখা হয়েছে

রাস্তায় রাস্তায় ময়লার স্তুপ দুষণে-দুর্গন্ধে জনভোগান্তি

রাস্তায় রাস্তায় ময়লার স্তুপ দুষণে-দুর্গন্ধে জনভোগান্তি

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) ►

নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও এই শহরের রাস্তাগুলোই যেন ডাস্টবিন। পাড়া মহল্লার অলিগলির রাস্তাই শুধু নয় প্রধান প্রধান সড়কগুলোও ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র খোলাস্থানে রাস্তাজুড়ে ময়লার স্তুপ হওয়ায় এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় যান চলাচলসহ লোকজনের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। 

বিশেষ করে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জমে থাকা আবর্জনা দিনের পর দিন পরে থাকায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী। সরা-পঁচা ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষণ ঘটে চারপাশের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। ফলে জনভোগান্তি দেখা দিয়েছে পুরো শহরে। দীর্ঘ দিন থেকে এই পরিস্থিতি বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের উত্তরের মাথায় স্মৃতি অম্লান চত্বরের সামনে গৃহস্থালি ও পয়বর্জ্যের স্তুপ। এখানে বছরের পর বছর ধরে এভাবে ময়লা ফেলে অনির্ধারিত উম্মুক্ত ডাস্টবিনে পরিণত করা হয়েছে। 

পৌর কর্তৃপক্ষই এইস্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করেছে। ফলে রেলওয়ে কারখানা, স্টেসন, হাসপাতালসহ ৩ টি ওয়ার্ডের ও একটি ইউনিয়নের লোকজনের চলাচলের অন্যতম এই সড়কটি নোংরা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে পড়েছে। এতে যাতায়াতে অসহনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে লোকজন। সাথে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পরিবেশ।

একই অবস্থা বঙ্গবন্ধু চত্বর (পাঁচমাথা মোড়) থেকে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়গামী সড়কের। এই রাস্তায় সাবেক মেয়ের মরহুম আখতার হোসেন আধুনিক পৌর সবজি বাজারের দক্ষিণ মাথায় কলাহাটি সংলগ্ন এলাকায় সড়কের উপর আবর্জনার বিশাল স্তুপ। 

জনবহুল এলাকা এবং ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় প্রতিমুহূর্তে অকল্পনীয় ভোগান্তি সইতে হচ্ছে জনগণকে। সেইসাথে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রাস্তাটা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি ওই নোংরার রোগজীবাণু যানবাহনের চাকা আর লোকজনের পায়ে পায়ে শহরময় ছড়িয়ে পড়ছে। 

এছাড়াও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নিয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের দুইপাশে মূল সড়কেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী উম্মুক্ত ডাস্টবিন। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা সহ দোকানদার ও পথচারীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। 

এসব হলো উল্লেখযোগ্য কয়েকটির বর্ণনা। এগুলোর পাশাপাশি বড় বড় প্রায় সব সড়কেসহ পাড়া মহল্লার প্রতিটি রাস্তায় এমন উম্মুক্ত ময়লার স্তুপের ছড়াছড়ি। এমন কোন ওয়ার্ড নাই যেখানে রাস্তায় খোলাভাবে আবর্জনা ফেলা হয়না। এসব ময়লা আবর্জনা সপ্তাহেও পরিষ্কার না করায় সমগ্র শহরই স্থায়ী ডাস্টবিন হয়ে গেছে। 

কামরান নামে জিকরুল হক সড়কের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও আমরা ন্যুনতম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সামান্য ময়লা ফেলার ডাস্টবিনও নেই পর্যাপ্ত পরিমানে। যে কারণে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলতে হয়। এতে শহরের অধিকাংশ রাস্তাই আজ যেন ডাস্টবিন। চলাচলে দুর্বিষহ ভোগান্তি আর দুর্গন্ধে দম আটকানোর অবস্থা। কলাহাটির আবর্জনার স্তুপটা সরানো হক নয়তো স্থায়ী ডাস্টবিন করে দেয়া হোক।

আশরাফ আলী নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, চলতি পৌর পরিষদের কাছ থেকে সব ধরণের সেবা থেকে সৈয়দপুরবাসী বঞ্চিত। শহরের ৮০ শতাংশ রাস্তাই ভেঙে চুড়ে আজ চলাচল অযোগ্য। তারওপর জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তুপ। নোংরায় ভরা পুরো এলাকা। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম না চালানোয় উৎকট গন্ধে টেকা দায়। তার মধ্যেই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বিগত ৩ বছরে উন্নয়ন তো দূরের কথা স্বাভাবিক কার্যক্রমও হয়নি। ফলে প্রথম শ্রেণীর পৌরবাসী তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছি। ময়লার স্তুপমুক্ত শহর চাই।

রবিউল নামের এক পৌর নাগরিক বলেন, মেয়র আসলে চরম স্বেচ্ছাচারীভাবে পৌরসভা চালাচ্ছে। জনগণের মেন্ডেট ছাড়াই চেয়ারে বসার কারণে জবাবদিহিতার বালাই নেই। জনভোগান্তি লাঘবে সামান্যতম প্রচেষ্টা নেই পৌর পরিষদের। রাস্তায় রাস্তায় ময়লার ভাগার, ড্রেনগুলো আবর্জনায় ভরা। সময়মত পরিষ্কারের উদ্যোগ নাই। সামান্য বৃষ্টি হলেই সিংহভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা। রাস্তাগুলো চলাচল অযোগ্য হলেও বিন্দু মাত্র মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। মেয়রের আশেপাশের সবাই যেন মেয়র। সবাই লুটপাটে ব্যস্ত, জনসেবার সময় কোথায়? জনগণও তিন বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সেবা বঞ্চনার দূর্ভোগ। 

এব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার কনজারভেন্সী ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো সৈয়দপুর শহরেই সব কাজই রাস্তায় হয়। তাই রাস্তায় ময়লা আবর্জনা থাকলে সমস্যা কি? প্রতিদিনের জঞ্জাল তো দৈনন্দিনই সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় বিকাল গড়িয়ে যায় এই আর কি। এতটুকু সহ্য করতে হবে। এটা সৈয়দপুর, সিঙ্গাপুর তো নয়। 

পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, ৩ লাখ জনসংখ্যার এই শহরে মাত্র ২০ টি ডাস্টবিন রয়েছে। জনবহুল ঘিঞ্জি শহর হওয়ায় ময়লা আবর্জনা ফেলার পর্যাপ্ত জায়গার সংকট। জনগণ জায়গা না দেয়ায় উদ্যোগ সত্বেও আর ডাস্টবিন তৈরী করা সম্ভব হয়নি। 

যেখানে যেখানে মানুষজন ময়লা ফেলছে সেই জায়গাগুলোতে ডাস্টবিন করে দিলেতো কমপক্ষে এলাকাগুলো নোংরা হওয়া থেকে রক্ষা পেতো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত হতো। কেন তা করা হচ্ছেনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নাই। মেয়র ও সচিবই এনিয়ে ভালো বলতে পারবেন।

পৌরসচিব সাইদুজ্জামান বলেন, আমি নতুন এসেছি তাই এখনও সব বিষয়ে জানা হয়ে উঠেনি। সেকারণে এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। 

পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী মুঠোফোনে বলেন, এব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করে পরে জানাবো। এর কিছুক্ষণ পর নিজেই কল দিয়ে জানান, এসব এলাকায় ডাস্টবিন আছে কি না তা আগেই যাচাই করতে হবে। ডাস্টবিন থাকার পরও যদি রাস্তায় ময়লা আবর্জনা ফেলে তাহলে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত ৩ বছরেও কি এনিয়ে জানা বা বোঝা শেষ হয়নি প্রশ্ন করলে তিনি সামগ্রিক বিষয়টি এড়িয়ে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়