Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-৪-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:৫১

মোবাইলে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা

মোবাইলে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা

প্রযুক্তি ডেস্ক ►

মোবাইল ফোনে প্রথম কল করার ৫০ বছর পর আমাদের পকেটে থাকা প্রযুক্তিটি বিশ্বের বৃহত্তম ভূমিকম্প শনাক্তকরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে সহায়তা করছে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চল ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এটা বেশ বড় ঝাঁকুনি ছিল। সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপে (ইউএসজিএস) বার্তার বন্যা বয়ে যায়। এই ভূমিকম্পে কোনো য়তির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্পটি অন্যভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কম্পন শুরু হওয়ার আগেই ওই এলাকার অনেক লোক তাঁদের ফোনে সতর্কতা পেয়ে যান।

ভূমিকম্পের প্রাথমিক সতর্ক ব্যবস্থা তৈরি করতে ইউএসজিএস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিাবিদদের সঙ্গে কাজ করছে গুগল। এটি মোবাইল ব্যবহারকারীদের কম্পনের কয়েক সেকেন্ড আগেই সতর্ক করে দিচ্ছে।

এটি সতর্কতার একটি সংপ্তি ব্যবস্থা। তবে এতে কয়েক সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। ফলে টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় মেলে। এ সময়টুকু ট্রেনের গতি কমানো, বিমানকে উড্ডয়ন বা অবরণ থেকে বিরত রাখা এবং গাড়িকে সেতু বা টানেলে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট। যেমন শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে এই সিস্টেমটি জীবন বাঁচাতে পারে।

এটি দুটি উৎস থেকে উপাত্ত ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে এটি ইউএসজিএস, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে এবং ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে স্থাপন করা ৭০০ সিসমোমিটার পৃথিবীর কম্পন শনাক্ত করে। তবে গুগল জনসাধারণের ব্যবহৃত ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম ভূমিকম্প শনাক্তকরণ নেটওয়ার্কও তৈরি করছে।

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত বেশিরভাগ স্মার্টফোনে অন-বোর্ড অ্যাক্সিলোমিটার থাকে। কখন একটি ফোন সরানো হচ্ছে এই ব্যবস্থায় তা শনাক্ত করা যায়। এগুলো সাধারণত ফোনটিকে পোর্ট্রেট থেকে ল্যান্ডস্কেপ মোডে ডিসপ্লেটিকে কাত করতে বলার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এটি আপনার ফোনের সেটিংস অ্যাপের নিরাপত্তা এবং জরুরি বিভাগে পাওয়া যাবে। সিস্টেমের জন্য ওয়াইফাই বা মোবাইল ডেটার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা প্রয়োজন। জাপানে বসবাসকারী আইফোন মালিকরাও জরুরি সতর্কতা চালু করতে পারেন।

এই সেন্সরটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং এটা ছোট আকারের সিসমোমিটার হিসেবে কাজ করতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড চালিত ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমিকম্পের সতর্কতা পাঠানোর জন্য গুগল একটি ফাংশন চালু করেছে যা ব্যবহারকারীদের ফোনকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যান্ড্রয়েড ভূমিকম্প সতর্কতা সিস্টেমে তথ্য পাঠানোর সুযোগ দেয়। ডিভাইসটি ভূমিকম্পের প্রাথমিক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যযুক্ত কম্পন গ্রহণ করে। এভাবে লাখ লাখ ফোন থেকে উপাত্ত একত্রিত করে সিস্টেমটি ভূমিকম্প কোথায় হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে পারে। এটি তখন সেই এলাকার ফোনে সতর্কবার্তা পাঠাতে পারে যেখানে ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এভাবে এটি প্রাথমিক সতর্কতা দেয়। কারণ রেডিও সিগন্যাল ভূমিকম্পের তরঙ্গের চেয়ে দ্রুত চলে। তাই কেন্দ্র থেকে দূরে এলাকায় কম্পন শুরু হওয়ার আগেই সতর্কতা আসতে পারে।

অ্যান্ড্রয়েডের সফটওয়্যার প্রকৌশলী মার্ক স্টোগাইটিস এটিকে এভাবে বলেছেন, ‘আমরা মূলত ভূমিকম্পের গতির বিপরীতে আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছি। আমরা ভাগ্যবান যে আলোর গতি অনেক বেশি!’

এ পদ্ধতিতে বেশিরভাগ উপাত্ত সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন থেকে আসে। তাই প্রযুক্তিটি এমন এলাকায় ভূমিকম্প পর্যবেণের সম্ভাবনা খুলে দেয়, যেখানে ব্যয়বহুল সিসমোমিটারের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নেই। এর অর্থ বিশ্বের এমনকি প্রত্যন্ত এবং দরিদ্র অঞ্চলেও ভূমিকম্পের সতর্কতা জানানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সারাবিশ্বে ব্যবহৃত আনুমানিক ১৬০০ কোটি মোবাইল ফোনের মধ্যে ৩০০ কোটিরও বেশি ফোনে অ্যান্ড্রয়েট সুবিধা রয়েছে। তাই ভূমিকম্প সতর্কতা সিস্টেম এখন ৯০টিরও বেশি দেশে চালু হয়েছে, যেখানে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এই সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অল্পসংখ্যক ফোন ব্যবহারকারী আছে। আবার সমুদ্রতীরে ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করতে পারে। তাছড়া এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্কতা জারি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে ভূমিকম্প হওয়ার আগে পূর্বাভাস দেওয়ার সমতা বিজ্ঞান আজও অর্জন করতে পারেনি। সূত্র : বিবিসি 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad