কঙ্কন সরকার ►
দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘন সবুজে পাতার মাঝে ধুসর বর্ণা গোল গোল বল। দেখতে লিচুর মত, তবে আকারে ছোট ঝোপা ঝোপা ফলগুলোর নাম আঁশফল। যদিও সে ফলে আঁশ খুঁজে পাওয়া যায় না। যাহোক, আঁশফলকে অন্য নামেও ডাকা হয়। যেমন— রাজফল, আজফল, আচফল, রঙন ফল, কাঠলিচু ইত্যাদি।
পাকলে বেশ মিষ্টি স্বাদের হয়। ছাল কিছুটা শক্তগোছের। আর বিচিটা আকারে বড় কালচে খয়েরি রঙের। আষাঢ় মাসে যখন পাকতে শুরু করে তখন এর তলায় ছোটদের আনাগোনা বেড়ে যায়। খেলাধুলার খানিকটা সময় ও মন এ গাছতলাতেই থাকে তাদের। কেননা, পাখির সহযোগিতায় টুপটাপ করে পড়তে থাকে দুচারটা করে।
আমাদের উঠানে গাছটি লাগিয়েছিলেন বাবা। তখন এ নতুন ধরনের ফলের গাছ শুনে আর্যশ্চই হয়েছিলা- রাজফল! ফলের রাজা! আজ গাছটি অন্য সব গাছগুলোকে ছেড়ে লম্বা হয়ে উঠেছে। গায়ের বাকল ধুসর। তবে ফাটা ফাটা। পাতা কিছুটা লিচুর পাতার মত। গাছটির বাকল নরম ও ফাটা ফাটা হওয়ায় মাঝে মাঝে বিড়ালকে দেখি তার নখর দিয়ে আঁচড়াতে।
মার্চ-এপ্রিলে মুকুল দেখা যায়। তখন ঘ্রাণ ছড়ানোর সাথে সাথে মৌমাছি প্রজাপতির সাথে সখ্যতাও হয় বেশ। আর আষাঢ়ে যখন পাকে তখন পাখি, বাদুড়, চামচিকা আর গন্ধগোকুলের সাথে সখ্যতা বাড়ে। অবশ্য কোনোবার কোনোবার বাদুড় আমাদের খেতেই দেয় না। এক রাতেই সাবাড় করে। যদিও আফসোস হয় না। ওদেরও তো খেতে হবে! এই আঁশফল এখনো অনেকের কাছেই অপরিচিত। অনেকেই আবার জানেন না কীভাবে এটি খেতে হয়!
এখনো এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় আমাদের । আবার নাম শুনে বা পরিচিত হলে খেতে ইচ্ছা করে যারা শোনে বা দেখে। আঁশফল দামে ততটা না হলেও বাজারে এসময় বিক্রয়ের জন্য ওঠে। কেউ জেনে আবার কেউ কৌতূহলে কিনে নেয়। তবে লিচুর মত অত সুস্বাদু না হলেও মিষ্টি স্বাদের সাথে আঁশফলের আছে পুষ্টিগুণ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এছাড়াও রয়েছে খনিজ পদার্থ, শর্করা, ক্যালশিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে জল। ফলটির ৭২ শতাংশ জুড়েই থাকে জল। আঁশফলের চামড়াতেও নাকি আছে
পুষ্টিগুণ। আঁশফলের ভেষজ গুণও নাকি আছে। ছোটদের প্রিয় এই ফল বড়রাও খেতে ভালোবাসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা-পার্বণে প্রসাদ হিসেবে এই ফলও যুক্ত করে। অবশ্য আঁশফল গাছ রোপণ করছেন এখন অনেকেই। -লেখক ও সংগঠক।