• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৯-২-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:২৩
  • ৯৯ বার দেখা হয়েছে

নিজ গন্ডি পেড়িঁয়ে মিতুর পণ্য যাচ্ছে এখন ঢাকা নিউ মার্কেটে

নিজ গন্ডি পেড়িঁয়ে মিতুর পণ্য যাচ্ছে এখন ঢাকা নিউ মার্কেটে

সোহেল রানা, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা)  ►

কাপড়ে এমব্রডারী নকশা তৈরি করে নারী উদ্যোক্তা মিতু বেগম এর ভাগ্য বদল। মিতুর এমব্রডারী সেলাই চাহিদা অন্যদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। সফল নারী উদ্যোক্তা মিতু বেগম পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী। মিতুর তৈরি করা পণ্যেও কদর ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে নিজ জেলা-উপজেলার গন্ডি পেড়িঁয়ে এখন তার পণ্য যাচ্ছে ঢাকা নিউ মার্কেটে।

গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় পণ্য ভিত্তিক পল্লী তৈরিতে পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিপির অপেক্ষাকৃত দরিদ্র,সুবিধা বঞ্চিত,বিধাব নারী,প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গঠিত সমিতির আওতায় বেকার দরিদ্র মহিলাদের এমব্রডারী কাজ করে পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে মিতু বেগম এমব্রডারী প্রশিক্ষণে সুযোগ নিয়ে কাপড়ে এমব্রডারী নকশা তৈরির মাধ্যমে সফল নারী উদ্যোক্তা মিতু বেগম সংসারে এখন স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন।

জানা যায়, অভিজ্ঞতা না থাকলেও মায়ের গৃহ শিক্ষা থেকেই ২০০৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন মিতু বেগম সেলাইয়ের কাজ। মিতু বেগম আশেপাশের মানুষের জামা-কাপড় সেলাইয়ের পাশাপাশি বাজারজাত করণের জন্য তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের পোষাকের কাজ। সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে কাজে চাহিদা।এরপর পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি অফিস থেকে ৩০ দিনের এমব্রয়ডারির প্রশিক্ষন গ্রহন করেন মিতু।

প্রশিক্ষন নিয়ে ঋনের জন্য পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি অফিস ২০২১ সালে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। ঋনের টাকা নিয়ে মিতু তার  কারখানা বাড়াতে বাড়ীর আশেপাশের নারী মা,বোনদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার কারখানায় নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিসে থেকে প্রশিক্ষন গ্রহনের সুযোগ করে দেন। মিতু বেগম এর কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা প্রত্যেককে সংসারের সব কাজ সম্পন্ন করে এমব্রডারী, নকশীকাঁথাসহ বিভিন্ন পোষাক তৈরি করে নিজের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন। এখন মিতুর কারখানায় প্রায় ৩শ”জন নারী হাতের কারুকাজ করছেন। কারখানাটিকে এগিয়ে নিতে পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান এমব্রডারী, নকশী কাঁথাসহ অন্যান্য কারুকাজে সুন্দর্য্য, কাজের মান ও বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরির পরামর্শ ও সহযোগীতা করে আসছেন। পরামর্শ অনুযায়ী কাজের মান ও বিভিন্ন ধরনের নকশা করে পোষাক তৈরি শুরু করেন।

এমব্রডারী, নকশী কাঁথার সুন্দর্য্য,বিভিন্ন ধরনের নকশা করে হাতের কারুকাজের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করছেন। সেগুলো হচ্ছে, নকশীকাঁথা, বেডসীড, কৃশন, শাড়ী, থ্রী পিচ, ওরনা, সেলোয়ার, টি-শার্ট, পাঞ্জাবী, নকশি চাদর,সোপার কৃশন,কৃশন কভারসহ বিভিন্ন আধুনিক পণ্য তৈরির ফলে ক্রেতাদের মাঝে সকল তৈরি পণ্যও যেমন চাহিদা বাড়েছে তেমনি বিক্রিও বেড়েছে। মিতুর তৈরি করা পণ্যেও কদর ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে নিজ জেলা-উপজেলার গন্ডি পেড়িঁয়ে এখন তার পণ্য যাচ্ছে ঢাকা নিউ মার্কেটে।

রুমি বেগম নামে নারী শ্রমিক জানান, মিতু আপার মাধ্যমে পলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিসে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপার কারখানায় কাজ করছি। আমি নিজে আয় করে আমার নিজের চাহিদা মিটিয়ে সংসারের ছোট খাটো চাহিদা মেটাতে পারি।

নাাছির খানের স্ত্রী তাজমিনা আকতার জানান, আমার অভাব অনাটনের সংসারে যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম তখন আমার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে মিতু আপার সাথে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে মিতু আপার মাধ্যমেপলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিসে এমব্রডারী ট্রের্ড এ প্রশিক্ষণ নিয়ে আপার কারখানায় কাজ করছি। এখন সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

মুক্তা জানান, মিতু আপুর কারখানা চালাতে সহযোগিতা করছি। আপুর কারখানার যেসব নারী শ্রমিক বাড়িতে কাপড় নিয়ে গিয়ে কাজ করে তাদের নাম ও কাপড়ের পরিমান বইয়ে লিপিবদ্ধ করি এবং যে কাপড়গুলি ব্যবহারের অনুপোযী সেসব কাপড়গুলি বাচাই করি।

মিতু জানান, আড়ৎ থেকে অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় নারী শ্রমিক এর সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে। প্রতি মাসে বিভিন্ন ধরনের কাজের তৈরির জন্য কাপড়ের অর্ডার পান ৫ হাজার। সময়ে বেশিও অর্ডার দেয়। তবে কাজের অর্ডার দর ধরে নেই। এর আগে আমি মায়ের শিখানো হাতের কাজ সম্বল করে তৈরি করতাম শাড়ীতে পুঁথি বসানো, জরির কাজ, পাঞ্জাবি, বেডশীট, ম্যাক্সি, স্কাফ, লেহেঙ্গা, বোরখা, বিবাহের পোষাক, পহেলা বৈশাখের পোষাক বালিশের কভার, বেডসীডসহ রুম সাজানোর কাজ। 

পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রিুত গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় পণ্য ভিত্তিক পল্লী তৈরিতে গঠিত ৪টি সমিতির আওতায় প্রায় ১শ”৫০জন নারীকে এমব্রডারী বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। অধিকাংশ সুফল ভোগী প্রশিক্ষন নিয়ে ঋণ গ্রহন করে এই কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছেন। এলাকার অনেক বেকার দরিদ্র মহিলাদেরকেও এমব্রডারী কাজে যুক্ত করায় বর্তমানে প্রায় ৩ শ’বেকার মহিলা এমব্রডারী কাজ করে পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত, বিধাব নারী, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সমিতি গঠনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা তৈরি করি। স্বাবলম্বী হতে তাদেরকে আমরা চাহিদা মত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা, কাজে সহায়তা, পণ্য বাজারে বিক্রিতে সংযোগ তৈরি করে দেই। এ উপজেলায় বিআরডিবির আওতায় ৭০টি সমিতি গঠন রয়েছে এর প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নকশী পল্লী, ব্যাগ পল্লী সেখানে উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। 

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান, মিতু এমব্রডারীর সেলাই এর মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন। তিনি খুব ভালও করছেন। অন্যান্য উদ্যোক্তারাও বেশ ভাল করছেন। তাদের কার্যক্রম বাড়াতে আমরা ঋণ প্রদান এর মাধ্যমে সহযোগীতা করে আসছি। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়