• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৫-৪-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:০৭
  • ৭৯ বার দেখা হয়েছে

নবজাতকের মৃত্যু, সিজারকালে পেট কাটায় নাড়ি বেরিয়ে পরার অভিযোগ

নবজাতকের মৃত্যু, সিজারকালে পেট কাটায় নাড়ি বেরিয়ে পরার অভিযোগ

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►

সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের পেট কেটে ফেলায় নাড়ী ভুড়ি বেড়িয়ে পড়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা না করায় মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত মেয়ে শিশুর পরিবার এমন অভিযোগ করলেও অপারেশনকারী চিকিৎসক দম্পতির দাবী প্রিম্যাচিরিউট বেবী হওয়ায় বাচ্চাটির এমন অবস্থা হয়েছে এবং অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিতে বললেও না নেয়ায় শিশুটি মারা গেছে।

শিশুটির অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়লেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা কোন প্রকার চিকিৎসা না পাওয়ায় অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে অবহেলার শিকার অসহায় শিশুটি। দরিদ্র বাবা মা সহ পরিবারের লোকজন নিরব নিথর হয়ে পড়েছে। 

এই ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকাল ৬ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের বাঙ্গালীপুর মোড়ে অবস্থিত সূর্যের হাসি ক্লিনিকে।

খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা পৌছার পর থেকে থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাপাত্তা। বিকালে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে ওই চিকিৎসক দম্পতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং ফুটেজ নিতে গেলে ধাক্কা দিয়ে ক্যামেরাম্যানকে সরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধায় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন উপস্থিত হলেও চিকিৎসক ও ম্যানেজারসহ কেউই উপস্থিত হয়নি। পরে প্রশাসনের সামনে মৃত নবজাতকের বাবা সৈয়দপুরের পার্শবর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বিলাইচন্ডি এলাকার দিনমজুর রওশন সরকার রাজু তার অভিযোগ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তার গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করায় এই ক্লিনিকে। দিনশেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় সিজার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের ডা. মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ডা. নূর নাহার নার্গিস। শিশুটির জন্মের পর ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমান জানান বাচ্চার জন্মগত সমস্যা হয়েছে এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। রংপুরে নিতে হবে। রাত ৮ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক বলেন এই শিশুকে বাঁচানো সম্ভব নয় এবং আগামীকাল সকাল ১০ টার আগে বড় ডাক্তার আসবেনা। তাই রাতেই ক্লিনিকে ফেরত আসি।

তখন থেকে মারা যাওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকের ডাক্তাররা আমার বাচ্চার কোন ট্রিটমেন্ট করেনি। এমনকি আমরা যে রংপুর থেকে ফিরে এসেছি কি করলাম বা কি করতে হবে সে ব্যাপারে তারা কোন খোঁজখবর নেয়নি। তদারকি বা পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করেনি। এক কথায় তারা কোন দায়িত্বই পালন করেনি। তাদের অবহেলার কারণেই আমার প্রথম সন্তানকে একদিনেই হারিয়ে ফেললাম।

রাজু আরও বলেন, এখন বলছে বাচ্চার আগে থেকেই সমস্যা ছিল। অথচ কয়েকদিন আগেও আলট্রা সনোগ্রাম করেছি তাতে সব কিছু নরমাল ছিল। তারা সব ঠিক দেখেই তো সিজার করেছে। মূলতঃ সিজার করার সময় পেট কেটে ফেলায় নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রংপুরে যেতে বললেও রেফার্ড স্লিপ বা কোন কাগজপত্র দেয়নি তারা। এমনকি আলট্রা সনো রিপোর্টগুলোসহ রোগীর ফাইল লুকিয়ে রেখেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।

এরপর ক্লিনিকের নার্স শাপলা বিশ্বাস বলেন, প্রিম্যাচিরিউট বেবি হওয়ায়  শিশুটির নাভির কাছে চামড়া অপূর্ণাঙ্গ থাকায় কিছুটা নাড়ি বেরিয়ে এসেছে। আমরা তৎক্ষণাৎ রংপুরে নিয়ে যেতে বলেছি। কিন্তু রোগীর লোকজন ব্যবস্থা  নেয়নি। আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? কর্তৃপক্ষ পলাতক কেন? এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

উভয়পক্ষের কথা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, কি কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তাই শিশুর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে সে অনুযায়ী পুলিশি তদন্ত ও চিকিৎসা বিষয়ক তদন্তও হবে। তারপর  আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপাতত লাশ নীলফামারী জেলা সদর হাসপাতালে পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠানো হবে এবং এরপর দাফন করা হবে। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা বিষয়ে প্রমান পাওয়া গেলে তারও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) আমিনুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেলোয়ার হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি সাকির হোসেন বাদল প্রমুখ।

ডা. মিজানুরের সাথে পুরাতন বাবুপাড়ায় তার ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দোতালায় গেলে তিনি বলেন, আমাদের কোন ভুল নাই। থানার ওসিকে জানিয়েছি। তিনি সব ম্যানেজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই কিছুই হবেনা। আমরা নিয়মিত ট্যাক্স দেই। এটুকু সুবিধা তো পুলিশ দিবেই। আপনারা যতই নিউজ করেন কোন অসুবিধা নাই। তবে বুঝে সুঝে নিউজ করবেন। নয়তো আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো বলে হুমকি দেন।

ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে আমি আজ বাইরে আছি। কাল আসেন আপনাদের সাথে কথা হবে। এরচেয়ে বেশি কিছু এখন বলতে পারবোনা।

ওই এলাকার সাজেদুর রহমান নামে একব্যক্তি জানান, শহরের শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তিরা কখনই এখানে চিকিৎসা নেয়না। স্বাস্থ্যকর্মী পরিচয়ে কিছু দালালদের গ্রাম পর্যায়ে কমিশন ভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে স্বল্প খরচে দরিদ্র অসহায় মা ও শিশুর পরিচর্যার লোভ দেখিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত ও অসচেতন লোকজনকে এই ক্লিনিকে সিজারের জন্য আনা হয়। কিন্তু পরে নানা অজুহাতে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়। অথচ সেভাবে সেবা দেয়না।

তিনি আরও বলেন, এরা প্রায়ই এমন করছে। অভিযোগ আছে দায়িত্বশীল  চিকিৎসক আয়া বা এই জাতীয় আনাড়ীদের দিয়ে সিজার করিয়ে থাকেন। কিছুদিন আগে এমনটি ঘটেছিল এক প্রসূতির সঙ্গে। দ্রূত রেফার্ড করলে রোগীর স্বজনরা মিশন হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফলে রোগী বেঁচে যায়। এমন ঘটনার প্রতিবাদ করলে জনৈক দায়িত্বশীল মহিলা ডাক্তার তাদের অপমান করে বের করে দেন। সেবার নামে ব্যবসায় মত্ত ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এদিকে প্রশাসন আসার আগে সাংবাদিক ও রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে গেলে ডা. মিজানুর বহিরাগত মাস্তান দিয়ে বাধা প্রদানসহ বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘটনা ধামাচাপা এবং ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তার নিজেই কল করে পুলিশ ডেকে আনে। অথচ বিকালে মৃত শিশুর বাবা ওসিকে মোবাইল করলেও পুলিশ আসেনি। পরে গভীর রাত পর্যন্ত ক্লিনিকের সামনে ক্ষুদ্ধ ও কৌতুহলী লোকজন অবস্থান করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও এই ক্লিনিক নবজাতক, প্রসূতি ও ১০০ শয্যা হাসপাতালের এক নার্স সন্তান প্রসবকালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরও ব্যবস্থা না নেয়ায় বার বার এমন ঘটনার অবতারণা হচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। তারা এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়