• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৬-৫-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০১:০৬
  • ৩৯ বার দেখা হয়েছে

নওগাঁয় গবাদীপশুর ২৪ ঘন্টার জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্র 

নওগাঁয় গবাদীপশুর ২৪ ঘন্টার জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্র 

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ  ►

দেশের মধ্যে এই প্রথম নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে গবাদীপশুর সার্বণিক বিনামূল্যে জরুরী চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে ২৪ঘন্টার জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে সপ্তাহের সাতদিনই যে কোন সময় যে কেউ এসে গবাদী পশুর যেকোন রোগের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। নিজ উদ্যোগে এই কেন্দ্র চালুর পর থেকে প্রশংসায় ভাসছেন বদলগাছী উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ নাজমুল হক (সাগর)।

জেলার বাকি উপজেলাসহ সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় এই ধরণের কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে গবাদীপশুর জরুরী চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হলে দেশের প্রাণীসম্পদ খাত আরো সমৃদ্ধশালী হতো বলে মনে করছেন সচেতনমহল। তাই সরকারি ভাবে এমন উদ্দ্যোগ দ্রুত পুরো দেশজুড়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রান্তিকপর্যায়ের খামারীসহ সকল ধরণের খামারীদের গবাদীপশু লালন-পালনে নতুন মাইলফলক চালু করতে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন নওগাঁবাসী।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ভবনের বাহিরের বারান্দায় একটি সুন্দর ডেস্ক করে রাখা হয়েছে। যেখানে বসে চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করছেন। আর তার পাশেই ৫জন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের মোবাইল নম্বরসহ নামের তালিকা করে বোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে যাতে করে খুব সহজেই চিকিৎসা নিতে আসা সেবাগ্রহিতারা কোন কারণে কেন্দ্রে চিকিৎসককে না পেলেও তাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাৎণিক চিকিৎসা নিতে পারছেন। এছাড়া হাসপাতালে গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ যাবতীয় গবাদীপশুর রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ বুথ, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বুথ ও অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের মাধ্যমে আধুনিক মানের উন্নত পশু চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।

সেবা কেন্দ্র থেকে যে কেউ ছুটির দিনসহ ২৪ঘন্টায় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। সেবা প্রদানের সঙ্গে সকল ধরণের ঔষধও বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এই কেন্দ্র থেকে। এই কার্যক্রম উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীসহ গবাদীপশু লালন-পালনকারী সাধারণদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ নাজমুল হক সরকারি সহায়তায় নিজ উদ্যোগে মানুষের চিকিৎসা সেবার মত গবাদীপশুর চিকিৎসাকে সহজীকরণের উদ্দেশ্যে সার্বণিক চিকিৎসার জন্য জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে চালু করেছেন ২৪ঘন্টার এই জরুরী সেবা প্রদান কেন্দ্র। 

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের প্রান্তিক খামারী শামছুল আলম বলেন গবাদীপশুর চিকিৎসার জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে হাসপাতালে তা আমার জানা ছিলো না। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে এসে আমার গরুর বিভিন্ন রোগের ব্যবস্থাপত্রসহ ঔষুধও বিনামূল্যে পেলাম। এতে করে আমি অনেক উপকৃত হলাম। বাহিরে থেকে চিকিৎসক নিয়ে গেলে তাদের অনেক টাকা ভিজিট দিতে হতো আবার বেশিদামে ঔষুধও কিনতে হতো। এতে করে আমার মতো অনেক ছোট খামারীরা উপকৃত হচ্ছে। 

আরেক সেবাগ্রহিতা উপজেলার পারসোমবাড়ী গ্রামের হাবিবুল হাসান বলেন এমন উদ্দ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। এই উদ্দ্যোগের মাধ্যমে অনুধাবন করা যাচ্ছে যে মানুষের মতো গবাদীপশুও অনেক মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া পশু হাসপাতালে আগের চেয়ে চিকিৎসা সেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে। সেবা দেওয়ার জন্য ডেস্কে একজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বসে থেকে সমস্যার কথা শুনে দ্রুত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করছেন। সত্যিই এটি একটি মহৎ উদ্দ্যোগ। 

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ নাজমুল হক (সাগর) বলেন দেশের গবাদীপশু খাতকে পেছনে রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে এই প্রাণীসম্পদ বিভাগ। দেশে প্রতিনিয়তই আমিষের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেভাবে কিন্তু আমাদের প্রাণী সম্পদ খাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

অপরদিকে বৈশ্বিক কারণে প্রাণীসম্পদ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীরা গবাদীপশু লালন-পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর গবাদীপশু লালন-পালনে সঠিক চিকিৎসাসেবা বড় একটা সমস্যা। আর উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়সহ সকল ধরণের খামারীদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করতে এবং গবাদীপশুর উন্নত চিকিৎসাসেবা সহজীকরণ করতে এমন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছি। যেন খামারী অন্তত গবাদীপশুর ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা পাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পান। 

তিনি আরো বলেন সরকারের পক্ষ থেকে আধুনিক গবাদীপশুর চিকিৎসা সেবা প্রদাণের লক্ষ্যে সকল উপকরণই প্রদান করা হচ্ছে। শুধুমাত্র সেই উপকরণগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ খামারীরা পশুহাসপাতাল থেকেও বিনামূল্যে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পেতে পারেন।

আমি মূলত সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে শতভাগ বাস্তবায়ন করতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মানুষরা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জরুরী বিভাগের মাধ্যমে যেমন সাবক্ষণিক চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন, তেমনি উপজেলাবাসীকে পশুহাসপাতাল থেকে গবাদিপশুরও সাবক্ষণিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমি নিজ উদ্যোগে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিমাত্র। আমি আশাবাদি উপজেলার শত শত খামারীরা পশুহাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে এমন জরুরী সেবা পেয়ে নতুন উদ্দ্যোমে গবাদীপশু লালন-পালনে উদ্বুদ্ধ হবেন আর আমাদের দেশের প্রাণীসম্পদ খাত দিন দিন আরো উন্নত হবে এবং অভ্যন্তরীন প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও আমিষ জাতীয় পণ্য রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবো। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়