সুলতান মাহমুদ চৌধুরী , দিনাজপুর ►
ইউরিয়া, এমওপি, টিএসপি, ডিএপিসহ সকল প্রকার রাসায়নিক সারের দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা।
জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন ফসলের ক্ষেত চারদিক সবুজ হলেও এখনো ইরি বোরো ধানের জমি সহ বিভিন্ন ফসলের সার প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই কৃষকেরা মাঠে ভালো ফসল পাওয়ায় আশায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন।
আকস্মিকভাবে রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ প্রতিটি কৃষি কাজের সাথে জড়িত প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ফসল উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পাবে বলেও তারা মনে করছেন চাষীরা।
বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকেরা জমি বর্গা চাষ নিয়ে আবাদ করায় তাদের যে পরিমাণ খরচ হয়। তাদের উৎপাদিত ধান ঘরের তোলার কাটা মাড়াই পর্যন্ত যে খরচ হবে। তাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের চেয়ে খরচ বেশি হবে। তারা অনেকটাই কৃষি কাজ থেকে বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
দিনাজপুর বিরলের বর্গা চাষি পারভেজ মোশারফ বলেন, আমি এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকায় এক ফসলের জন্য চুক্তি নিয়েছি । এরপরে জমি চাষাবাদ, বীজ তোলা, সার, কীটনাশক শ্রমিক খরচ এবং নিড়ানী যে খরচ হয়েছে । তিনি আরোও বলেন, এখন আবার নতুন করে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর উৎপাদন খরচ আরোও বেড়ে যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ধান হয় ৪০ মন, আর যদি উৎপাদন করতেই প্রায় ৩৮/৩৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় তাহলে তো কৃষি আবার করা সম্ভব নয় ।
একই এলাকার কৃষক মতিউর রহমান মতি বলেন ,প্রতি কেজি সারের দাম ৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়া এক বস্তা সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫০ টাকা যা উৎপাদন খরচের সাথে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে । বর্তমানে চাষাবাদ বিদ্যুৎ বিল কীটনাশক ও শ্রমিকের যে দাম দিতে হয় । এতে করে আবার রাসায়নিক সারের দাম ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা একেবারেই মারা যাবে । যদি এরকম করে সারের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে কৃষকেরা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে । দেশের খাদ্য উৎপাদনে যদি কৃষকেরা বিমুখ হয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক সে সংকট এবং খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আগের দাম এই সার দাম রাখার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি ।
বিরল এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, এই ইরি বোরো মৌসুমির মাঝপথে আবারও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব কৃষির সাথে চুক্ত অন্যান্য পন্যের দাম বেড়ে যাবে । ইরি বোরো ধানে আবারো দ্বিতীয় ডোজ সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে । এই সারের দাম আবার কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে । তাই উৎপাদন খরচ একসময় বেশি য়ে গেলে আমরা ফসল উৎপাদন থেকে বিমুখ হয়ে যাব। আমাদেরকে অন্য পেশায় ডাইভেট হতে হবে।
দিনাজপুর বিরল মেসার্স লিয়াকত আলি রাসায়নিক সার ডিলার ম্যানেজার মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পূর্বের দাম অনুযায়ী রাসায়নিক সারের দাম নিচ্ছি । নতুন চালানের সার ঢুকলে তখন হয়তোবা কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বৃদ্ধির যে সরকারের ঘোষণা এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
দিনাজপুর বিরলের, বিসিআইসি অনুমোদিত রাসায়নিক সার ডিলার লিয়াকত আলী বলেন, এই অঞ্চল কৃষি প্রধান, সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীদের উপর অনেকটাই প্রভাব পড়বে কারণ ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে ফসলের বাজার মূল্য, যদি উৎপাদন খরচ বেশি হলে চাষিরা উৎপাদন বিমুখ হয়ে পড়বে। এই পর্যায়ে অব্যাহত থাকলে ফসল উৎপাদন ও খাদ্যের উৎপাদন দেশের ঘাটতি হতে পারে।
দিনাজপুর বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিদের উপর অনেকটাই প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে কৃষি বিভাগ। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম হলে এবং জৈব সারের ব্যবহারের বেশি হলে চাষিরাও ফসল ভালো পাবেন বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ।