• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-২-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:০৩
  • ৩৪০ বার দেখা হয়েছে

দিনাজপুরে গাড়ল পালন করেই অনেক বেকার যুবক এখন স্বাবলম্বী

দিনাজপুরে গাড়ল পালন করেই অনেক বেকার যুবক এখন স্বাবলম্বী

সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►

দিনাজপুরে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ল (উন্নত জাতের ভেড়া) পালনে আগ্রহ বেড়েছে গাড়ল খামারীদের। 

দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নে উলিপুর গ্রামের মোঃ রেজাউল ইসলাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পরামর্শে গত ২০১৮ সালের শেষের দিকে মাত্র ৪৫ টি গাড়লের বাচ্ছা ক্রয় করে এনে গাড়ল পালন শুরু করেন। দুই বছর পর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন রেজাউল ইসলাম। এখন তার গাড়ল খামারে ২৩০টি গাড়ল রয়েছে। দুই জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। 

রেজাউল ইসলামের বাড়ীর পার্শ্বেই বিশাল টিকলির সরকারী চরন ভুমি থাকায়। এই চরম ভুমিতেই ছেড়ে দিয়েই খাদ্যোর চাহিদা পুরন করে থাকেন গাড়ল পালের।  বাড়তি কোন খাদ্যোর প্রয়োজন হয় না।  বছরে দুই বার ২ থেকে ৩টি করে গাড়ল বাচ্ছা দিয়ে থাকে। মাজার উপর গাড়ল থাকতে পছন্দ করে। এতে করে স্যাতস্যাতে পরিবেশে পছন্দ করে না। মাজার উপর থাকায় গাড়লের বৃষ্ঠা নীচে পড়ে যায়। পড়ে সেই বৃষ্ঠা বৈজ সার হিসাবে বিক্রি করা যায়।      

ভেড়ার একটি উন্নত প্রজাতি এ গাড়ল। এগুলো দেখতে প্রায় ভেড়ার মতো। দেশি ভেড়ার চেয়ে এটি আকারে বড়, মাংসও বেশি হয়।  গাড়লের লেজ লম্ব হয়। মাংসের চাহিদা মেটাতে দেশেই এখন দিনাজপুরে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে গাড়লের খামার। গাড়লের খামাবে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। অনেকে সফলতাও পেয়েছে আবার গাড়ল (ভেড়া) পালন করে, ভাগ্য বদল করে স্বাবলম্বী হয়েছে এলাকার অনেক বেকার যুবক।

তবে সরকারী সহযোগীতা ও সহজ শর্তে ঋন পেলে নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠবে আরো অনেক গাড়লের খামার এবং মাংসের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলেও মনে করেন এসব খামারীরা। বেকারত্বের হাতশানি থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার করে ৩ বৎসর আগে অল্প পরিসরে গাড়ল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ২শত গাড়ল (উন্নত জাতের ভেড়া) প্রাণি বিদ্যমান। 

গাড়ল পালনকারী রেজাউল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের মাত্র ৫০ হাজার টাকা মুলধন দিয়ে ৪৫টি গাড়লের বাচ্ছা ক্রয় করে গাড়ল পালনের যাত্রা শুরু করি। এর পর থেকে আর পিছন দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক সময় সংসাবে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এখন গাড়ল পালন করে বার্ষিক ৮ থেকে ১০ টাকা হয়। দুই বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুই জনের মাসিক বেতন ২২ হাজার প্রদান করছি।  সামনের দিকে দুম্ভা পালন করা পরিকল্পনা রয়েছে। 

রেজাউল ইসলাম আরোও জানান, গাড়ল ভেড়ার মাংস গন্ধ মুক্ত সুস্বাদু। পুষ্টি গুনেও ভাল। দেশের দনিবঙ্গে এর মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি মাংস ৭ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

নতুন ভাবে গাড়ল খামারী নাজমুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরের সদর উপজেলাতে ৭/৮ জন খামারীর প্রায় ১ হাজার গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালন করছে। তুলনামুলক গৃহপালিত অন্য প্রাণির চেয়ে গাড়লের রোগ বালাই কম হয় এবং দ্রুত মাংস বৃদ্ধি হয়, আবার এর মাংসে চর্বি কম থাকে। তিন বৎসর আগে এক শিতি বেকার যুবক কোন কিছু করার উপায় না পেয়ে গাড়ল পালনে উদ্বুদ্ধ হয়। বর্তমানে সে এখন স্বাবলম্বী। 

দিনাজপুর ভেটেরিনারী অফিসার ড. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, দিনাজপুর জেলায় বেশ কয়েকটি গাড়ল খামার গড়ে উঠেছে। অনেকেই স্বল্প পুঁজি বিনিয়ক করে এই গাড়ল পালনে আগ্রহী হচ্ছে। গাড়ল পালনে তেমন বাড়তি খরচ হয় না। এরা সাধারণত তৃন ভুজি। সবুজ ঘাস খেতে গাড়ল পছন্দ করে। চরন ভুমি থাকলে গাড়লের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তেমন রোগবালাই হয় না। গাড়ল ভেড়া পালনেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। দিনাজপুরে উন্নত প্রজাতির গাড়ল পালনে অনেকে এখন স্বাবলম্বী। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়