• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৬-৫-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:০৬
  • ৩৯ বার দেখা হয়েছে

দিনাজপুরে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু, কৃষি শ্রমিক সংকট নেই

দিনাজপুরে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু, কৃষি শ্রমিক সংকট নেই

সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►

দিনাজপুরে আগাম জাতের ইরি বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অন্য জাতের ধানও সোনালি বর্ণ ধারণ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সকল জাতের ইরি বোরো কাটতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন চাষীরা। 

জেলার প্রতিটি ইরি বোরো ধানের  ফসলের মাঠে যেদিকেই তাকানো যাবে সেদিকেই কেবল সোনালি ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কৃষকরা বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন। রোদ আর বাতাসে ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। 

চাষীদের কেউ কেউ সোনালী ধানের আবাদ ভাল ও ক্ষেতের ধান হলুদ বর্ণ ধারন করায় ধান কেটে আটি বেঁধে কাঁদে করে রাস্তার পার্শ্বেই মাড়াই এর কাজ করছেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই ধানের আর্টিসহ মাড়াই এর কাজ সম্পন্ন করছে। মাড়াই করা ধান রাস্তার পাশ থেকেই বস্তা বন্দি করেই বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষীরা।    
 
গত সপ্তাহ খানিক থেকে এই ধান কাটা মাড়াই শুরু হলেও আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই ইরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শেষ হবে যাবে। ধান কাটার মেশিন আসায় এই ধান কাটা  ও মাড়াই এর কাজ স্বল্প সময়ে শেষ হলে আবার বেকার হয়ে পড়বেন আশঙ্খকা করছেন কৃষি শ্রমিকরা।

আউলিয়াপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক নূর হোসেন বলেন, এখন প্রতিদিন ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা আয় করতে পারছি। ধান কাটার মাড়াই এর মেশিন আসায় আমরা বেশি দিন কাজ করতে পারব না। কারণ ১৫ জন শ্রমিক যে কাজ একদিনে করতে পারে। একটি ধান কাটার মেশিন তার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে। তাই স্বল্প সময়ে এই ধান কাটার কাজটি শেষ হয়ে যায়।      
 
একই গ্রামের চাষী লাবু ইসলাম বলেন, ৫০ শতক জমি আবাদ করতে সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেই জমিতে ধান হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ মন। বর্তমান বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। ধান আবাদ করে তেমন লাভ  হয়। ধান আবাদ করেও সরকারের দিকে ভর্তকীর জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়। 

দিনাজপুর সদরে হোসেনপুর গ্রামের চিকন চালের জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ধান কাটা শুরু করেছি। শ্রমিকদের চুক্তি দিয়েছি। তারা ধান কাটা এবং মাড়াই করে দেবে। গত বছরের মতো এ বছর শ্রমিক সংকট নেই। এই গ্রামের কৃষক তাজকিরুল বলেন, বিঘা (৩৩ শতক) ২২-২৫ মণ ধান হয়েছে। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তেমন লাভ হবে না। অন্য কোন পেশা যাওয়ার সুযোগ নেই তাই চাষাবাদ করতে হচ্ছে। 

চিরিরবন্দরের নান্দেরাই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার জমিতে ধান পাক ধরেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটতে পারবো। এবার ভালো ধান পাবো বলে আশা করছি।’বিন্যাকুড়ি গ্রামের আবু তালেব বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার আমার জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। দাম পেলে লাভবান হবো।’

এই গ্রামের চাষী  জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি ৪০ শতক জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। হঠাৎ গত দুদিন আগে গিয়ে দেখি পুরো জমির সব ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। পুরো লোকসানে পড়ে গেলাম।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন  চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। তবে চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। জেলায় নতুন জাতের ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, উফসি-২৯, বিআর ৫০, বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। এ ছাড়া ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান অনেক কৃষক চাষ করেছেন। সবে মাত্র এই জেলায় ধান কাটা মাড়াই এর ক্জা শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ইরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শেষ হবে। 

তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ সরকারি প্রণোদনার আওতায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি এসব ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও কীটনাশকও দেওয়া হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। বড় ধরনের ঝড়, বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি না হলে ভালো ধান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগামী ২০-২৫ দিনের ভেতর কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়