• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৭-৫-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
  • ৪৯ বার দেখা হয়েছে

তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় ৭ জন হাসপাতালে,১ জন মৃত্যু শয্যায়

তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় ৭ জন হাসপাতালে,১ জন মৃত্যু শয্যায়

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিহিংসা বশতঃ প্রতিপক্ষের দলবদ্ধ ও পূর্ব পরিকল্পিত হামলায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে নারী ও বৃদ্ধসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বর আহত ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

প্রভাবশালী কর্তৃক দরিদ্র অসহায় পরিবারের উপর এমন নৃশংস হামলায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ঘটনার বিচার দাবীতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৬ মে) সন্ধা ৭ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী ডাঙাপাড়ার ভাঙা মসজিদ এলাকায়। 

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে চিকিৎসারত মৃত নুর উদ্দীনের ছেলে মংলু মামুদ (৬০) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গত শুক্রবার বেলা ১১ টায় ওয়াইফাই সংযোগ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কারণে আমার ছেলে সজিবের সাথে প্রতিবেশী আজগার বিহারীর ছেলে মানিকের তর্কাতর্কি হয়। উপস্থিত এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক বিবাদ মিটিয়ে দেয়। এতে উভয়েই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। 

অথচ এই ঘটনার জের ধরে পরেরদিন শনিবার সন্ধায় মাগরিবের আজানের পরেই মানিকের নানা ডাঙাপাড়া স্কুলের ডাঙা এলাকার মোফার উদ্দীনের (৭০) নেতৃত্বে তাঁর ছেলেরাসহ তাদের স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতিন, জামাইরা প্রায় ৪০-৫০ জন লোক দলবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও রড নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

অশ্লীল গালিগালাজ এবং ঘরের বেড়া ও চালে আঘাতের শব্দে বড় ভাই ঝিলা মামুদ (৬৫) বাইরে বের হতেই মোফারের ছেলে সামসুল হক (৫৫) তার হাতের দা দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা কেটে গেলে তিনি মূহূর্তে আর্তচিৎকার করে মাটিতে লুটে পড়ে। তার মাথায় ৯টি সেলাই দিতে হয়েছে। 

মংলু মামুদ কাতরাতে কাতরাতে আরও বলেন, ওইদৃশ্য দেখে আমিও বের হলে মোফার উদ্দীন ও মানিক জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট ও এলোপাথাড়ি লাথি মারে। কোমড়ে ও পিঠে এমনভাবে থেতলে দিয়েছে যে, আমি আর দাঁড়াতে বা বসতে পারছিনা। সারা শরীরে চরম যন্ত্রণা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, আমাদের গোঙ্গানি শুনে ছোট ভাই আব্দুল মজিদ (৪০) আমাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে সামসুলের ছেলে সুমন (২০), মেয়ে সাবনুরের স্বামী সোহেল (২৮) ও সীমুর স্বামী লিটু (২৫), ইদ্রিস আলীর ছেলে রুবেল (২২) তাকে ঘিরে ধরে। আর এইসময় সামসুল বাইস দিয়ে আঘাত করলে মজিদের কপালে গভীরভাবে জখম হয়। 

এতে সে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। তারও ১৪ টি সেলাই দিতে হয়েছে। তার অবস্থা চরম গুরুত্বর হওয়ায় তাকে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে চিকিৎসক। সেখানে সে অজ্ঞান অবস্থায়  মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। 

সুলতানের ছেলে আতিকুল (২৩), সামসুদ্দিনের ছেলে সাকিলসহ মৃত রাজু মামুদের স্ত্রী সামিনা (৪৩), মানিকের স্ত্রী স্মৃতি (২২), মা তহমিনা বেগম (৪৪) সহ অজ্ঞাত আরও প্রায় ১০-১৫ জন লাঠিসোটা দিয়ে বাড়িতে ভাঙ্চুর চালায়। এতে বাধা দিলে আব্দুল মজিদের স্ত্রী সালমা (৩৫) এর উপর চড়াও হয়ে অনবরত মারডাং করাসহ পড়নের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে বিবস্ত্র করে। 

সালমাকে রক্ষায় এগিয়ে যাওয়ায় ঝিলা মামুদের স্ত্রী জাহেনারা বেগম (৫০) ও ছেলে জাহাঙ্গীর (১৮) মংলু মামুদের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম (৪০) কে বেধড়ক মারপিট করে। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। 

এবিষয়ে সৈয়দপুর থানার এস আই মোখছেদুল ইসলাম বলেন, জরুরী কল পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আহত ও জখম অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং থানায় লিখিত এজাহার দিতে বলেছি। মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে তারা থানায় আসবে বলে জানি। 

ঘটনার সত্যতা জানতে এলাকায় গেলে লোকজন জানান, মংলু ও ঝিল্লার পরিবার দরিদ্র অসহায়। সামসুল গংরা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের উপর নৃশংস হামলা করেছে। এঘটনায় জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত। নয়তো হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে অন্যদের সাথেও সচরাচর  এমন অমানবিক অত্যাচার করবে। 

সামসুল হক বলেন, শুক্রবার মংলুরা আমাকেসহ আমার ভাগিনা মানিককে মেরেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর কথায় তাদের ক্ষমা করে দিয়ে মিমাংসা করেছি। কিন্তু তারা বলে বেড়ায় যে, মার খেয়েও কিছু করতে পারিনি। তাই দেখিয়ে দিয়েছি। কি হবে দেখা যাবে। তবে মামলা করার সাহস পাবেনা। অন্যদিকে মানিক বলে, আমরা হামলা বা মারপিট করিনি। বরং তারাই লাঠি ও ধান কাটার কাচি নিয়ে হামলা করেছে। আমরাই আহত হয়েছি। 

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, মারামারির ঘটনায় ৭ জন হাসপাতালে আছে। এব্যাপারে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।  পেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়