• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-২-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:২৬
  • ১১৫ বার দেখা হয়েছে

ডিজেল-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষি!

ডিজেল-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষি!

নিজস্ব প্রতিবেদক ►

কৃষিভান্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা গাইবান্ধা। এখানকার অধিকাংশ পরিবার কৃষিজাত ফসলের ওপর নির্ভরশীল। চলতি বছর জেলায় বোরো মৌসুমের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তবে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতর দাম বাড়ায় বোরো চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। চাষাবাদের খরচ জোগাতে অনেকেই ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দরিদ্র ও বর্গা কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় এবার জেলার বোরো আবাদে প্রায় ১৯২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বাড়তি খরচ হতে পারে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকরা বোরোর চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আবার কেউ কেউ সার প্রয়োগ ও ক্ষেত পরিচর্যা করেছেন। অন্যান্য বছরের এই সময় কৃষকদের মুখে হাসি দেখা গেলেও এবার দেখা গেছে মলিন মুখ।
কৃষকরা জানান, সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদের খরচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের জন্য পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষ দিতে হয়। ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারে প্রায় ৪২.৫ শতাংশ। ফলে পাওয়ার টিলারের খরচ বেড়ে গেছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে যন্ত্রে ডিজেল বা পেট্রোলের ব্যবহার হয়, সেখানে গুণতে হবে বাড়তি খরচ। চলতি বোরো মৌসুম থেকেই বাড়তি এ বোঝা টানতে হবে তাদের।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ বছরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৮৫ ভাগ। লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ চালিত গভীর সেচযন্ত্র ২৩৯ টি, অগভীর ৩ হাজার ৫০টি, ডিজেল চালিত অগভীর ২ হাজার ৯৩২ টি, এলএলপি বিদ্যুৎ ১৭ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৩টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হবে।

কৃষক জহির উদ্দিন জানান, গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের বাড়তি খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গত বছরে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি ভাড়া দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছর বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তিনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুতের দামই নয়, সম্প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক   শ্রমিকের দামও বেড়েছে অনেক। সবমিলে এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আবার প্রাকৃতি দুর্যোগের প্রভাব পড়লে তো পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।

গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার পুঠিমারি গ্রামের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রাপ্ত কৃষক আমির হোসেন বলেন, আগের মৌসুমে কেনা ৬৬ টাকার ডিজেল বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১১২ টাকা পাইকারী দরে। আবহাওয়ার কারণে ১ বিঘা ধানের জমিতে সেচ দিতে কখনো ৩২ লিটার কখনো ৪৫-৫০ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়। দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে উৎপাদনে। সে তুলনায় আমরা লাভবান হচ্ছি না। বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক জামাত আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২ হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করেছি। কিন্তু এখনও বিদ্যুতের নতুন বিল হাতে পাওয়া যায়নি।

কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, সম্প্রতি সময়ে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরের দাম কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব কৃষি ক্ষেত্রেও পড়বে। সেচ কাজে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়বে। তবে তাদের লোকসান হবে না। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে লাভবান হবেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়