• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৫-২-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:২০
  • ১০৮ বার দেখা হয়েছে

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা  ►

শত শত বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিক তৈজসপাত্রের ভিড়ে এবং মাটির দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে মৃতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

গাইবান্ধার সাঘাটায় শীতের মৌসুমে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা দেখা যেতো । শিল্পীরা বাড়ি বাড়ি মাটি দিয়ে তেরী করতো হাড়ি-পাতিল, পাতিলের ঢাকনা,কলস,থালা, তরকারি কড়াই, রসের হাড়ি, ধুপ জ্বালানি পাত্র, মুড়ির পাতিল, বাতি জ্বালানি পাত্র,বাটি,ফুলের টব,ব্যাংক,পুতুল,শিশুদের হরেক রকমের খেলনা সহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপাত্র।  

মৃৎশিল্পীদের  সেই সব তৈজসপত্র তৈরীর প্রতি এখন আর আগ্রহ নেই । সারি সারি মাটির তৈজসপত্র এখন তেমন আর নজরে পড়ে না। মাটির জিনিসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ঝাড়াবর্ষা পালপাড়ায় দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। কেউ দধির পাত্র, ল্যাট্রিনের রিং তৈরি করছেন, কেউ আবার হাঁড়ি পাতিল পোড়ানোর কাজ করছেন। আর দধির পাত্র রোদে শুকানো হচ্ছে, নারী ও পুরুষ উভয়ে কাজ করেন।

আগের মতো মাটির তৈরী জিনিসপত্রের কদর না থাকলেও মৃৎশিল্পীর কয়েকটি পরিবার এখন বাপ-দাদার এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন।  সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা গ্রামের পালপড়ার মৃৎশিল্পী প্রশান্ত পাল বলেন, মাটির তৈজসপত্র বেচাকিনা বন্ধ হয়ে গেছে। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র তৈরী হওয়ায় মাটির তৈজসপত্র আর তেমন চলে না। মাটির তৈজসপত্র আগে ভালোই চলতো। সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতাম। সারাদিন কাজ করতাম, হাট-বাজারে যেতাম দুই-চার হাজার টাকা বিক্রি করতাম।

এখন আর আগের মতো মাটির তৈরী তৈজসপত্রের চাহিদা নেই। তাছাড়া মাটি ও জ্বালানী খরির দাম বেশী হওয়ায় মাটির তৈলীর তৈজসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও কমে গেছে। পাশাপাশি দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্রের দাপটে মাটির তৈজসপত্র প্রায় প্রায় অচল হয়ে গেছে। দধির পাত্র আর ল্যাট্রিনের পাট বা রিং এখন একটু চলে। দধির পাত্র ও ল্যাট্রিনের পাট বা রিং যদি বন্ধ হয়ে যায় এ পেশাই থাকবে না। সে ক্ষেত্রে অন্য পেশা বেছে নিতে হবে তা ছাড়া সংসার চলবে না।

মৃৎশিল্পী পবিত্র পাল বলেন, আধুনিক জিনিসের প্রচলন শুরু হয়েছে। যার ফলে মাটির জিনিস কেউ আর ব্যবহার করতে চাই না। অল্প সংখ্যক পরিবার এখন মৃৎশিল্প টিকিয়ে রেখেছে। এখন সবাই দস্তা, প্লাষ্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র ব্যবহার করে। মাটির হাঁড়ি পাতিল আর এখন চলে না। মৃৎশিল্পীরা এখন বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।
 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়