নওগাঁ প্রতিনিধি ►
সারা দেশব্যাপী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ১০হাজার ৭৪০টি পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রয় না করার কারণে অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি এই টিসিবির সঙ্গে প্রতিকেজি ৩০টাকা মূল্যে ৫কেজি করে চাল সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু চাল মানসম্পন্ন না হওয়ার কারণে সুবিধাভোগীরা বাহিরে বেশি দামে সেই চাল বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে করে সরকার যে লক্ষ্য তা শতভাগ ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রতিটি টিসিবি বিক্রয় কেন্দ্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক ভাবে পণ্য বিক্রি করার লক্ষ্যে নিযুক্ত ট্যাগ কর্মকর্তা না থাকার সুযোগে অনেক অনিয়মও দেখা গেছে। উপজেলার প্রতিটি টিসিবি বিক্রয় কেন্দ্রে এবং কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় কতিপয় ব্যক্তিরা সুবিধাভোগীদের বেশি দামের লাভ দেখিয়ে প্রকাশ্যে চালগুলো কেনার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নায্য মূল্যে টিসিবির পন্য বিক্রি কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে টিসিবির আওতায় সরকার অনুমোদিত ৪জন ডিলারের মাধ্যমে সঠিক তদারকিতে উপজেলার ১০হাজার ৭৪০টি কার্ডধারী পরিবার ৪৭০টাকার প্যাকেজে ২লিটার সয়াবিন তেল, ২কেজি মসুর ডাল ও ৫কেজি চাল পাচ্ছেন। উর্দ্ধগতির এই বাজারে কমমূল্যে এই পণ্য অনেকটাই স্বস্তি এনেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে। তবে টিসিবির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা চাল নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সুবিধাভোগীদের মাঝে। চালের মান খারাপ হওয়ার কারণে তা রান্না করে খাওয়া উপযুক্ত না হওয়ার কারণে অধিকাংশ সুবিধাভোগীরা সেই চাল বাহিরে কালোবাজারীদের কাছে একটু বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। সম্প্রতি খট্টেশ্বর রাণীনগর ইউনিয়ন প্রাঙ্গনে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে বেশি দামে এই চাল ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখা যায় কতিপয় ব্যক্তিদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন শুধু টিসিবির চালই নয় ভিজিডি ও ভিজিএফসহ অন্যান্য সুবিধার পাওয়া চালগুলোও হরহামেশাই বিক্রি হতে দেখা যায়। অনেকেই মনে করছেন এই সুবিধাগুলো যেসব ব্যক্তিদের প্রয়োজন নেই টাকার মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেই সব ব্যক্তিদের প্রদান করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আর এই সুবিধাগুলো যাদের পাওয়া খুব প্রয়োজন অথচ জনপ্রতিনিধিদের ঘুষ দিতে না পারার কারণে তারা পাচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ সুবিধাভোগীরা এই চালগুলো না নিয়ে একটু বেশি দামে বাহিরে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর কালোবাজারীরা এই চালগুলো কেনার পর তা মেশিনের মাধ্যমে পরিস্কার করে পুনরায় খোলাবাজারে অন্য আকর্ষনীয় নাম দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। অনেকেই আবার সেই চাল সিদ্ধ করে গরু ও পুকুরের মাছকে খাওয়াচ্ছে। ফলে সরকারের গৃহিত লক্ষ্য শতভাগ সফল হচ্ছে না।
১নং খট্টেশ্বর রাণীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দনা শারমিন রুমকি বলেন আমি ওই ব্যক্তিদের ডেকে কঠোর ভাবে হুশিয়ারী করে দিয়েছি। এছাড়া যে সব সুবিধাভোগীরা তাদের পণ্যগুলো বিক্রয় করেন তাদেরকেও ডেকে বলেছি আর যদি তারা পণ্য বিক্রি করেন তাহলে তাদের কার্ড ফেরত নিয়ে অন্য মানুষগুলোকে দিয়ে দিবো। আমি আশাবাদি আগামীতে আর এই ধরণের কাজ হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন আমি প্রতিজন ডিলার ও প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর ভাবে বলে দিয়েছি যে টিসিবিসহ অন্যান্য সকল সুবিধার পণ্যগুলো বিতরণে কোন প্রকারের অনিয়মকে বরদাস্ত করা হবে না। এছাড়া যারা কালোবাজারীর মাধ্যমে এই উপকরণগুলো কিনেন তাদরকেও হুশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে। আগামীতে যদি কেউ এই ধরণের কাজে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।