জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ►
চিনির মিল বন্ধ হওয়ার দরুন প্রচীন পদ্ধতিতে আখ মাড়াই শুরু করেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার আখ চাষিরা। কৃষি সমৃদ্ধ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা। এখানে শাক সবজি সহ নানা শস্য-চাষে সাফল্য পেয়েছে এ অঞ্চল কৃষক। অন্যান্য এসব ফসলের পাশাপাশি আখ চাষেও এখনও আগ্রহ রয়েছে এই অঞ্চলের কৃষকের। এই অঞ্চলের কৃষকের কম ফসলি বা পরিত্যাক্ত জমিতে আখ চাষ করে তা রংপুর চিনিকলে বিক্রি করে প্রতিবছর অধিক মুনাফা আয় করতো কৃষক। কিন্তু গত ২০১৮ সালে রংপুর চিনিকল বন্ধ হওয়ায় চাষিদের প্রাচীন পদ্ধতিতে আখমাড়াই করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরী করে তা বাজার জাত করতে হচ্ছে। বর্তমান মৌসুমে সাঘাটার চরাঞ্চলে আখের রস দিয়ে তৈরী হচ্ছে দেশীয় খাবার লালি ও গুড়।
এক সময় সাঘাটায় প্রচুর পরিমাণে আখের চাষ হতো। কিন্তু রংপুর চিনিকল বন্ধ হওয়ায় এবং অন্যান্য ফসল চাষ অধিকতর লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহ কমিয়ে অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে। চলতি মৌসুমে সাঘাটা উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে।
শীত মৌসুমে আখের রসে তৈরী লালি ও গুড় খেতে খুবই উপকারি। সাঘাটা অঞ্চলের শীত মৌসুমে আর্কষণীয় যে খাবার রয়েছে তা মধ্যে অন্যতম খাবার দারুণ সুস্বাদু আখের রসে তৈরি লালি ও গুড়। তবে লালি গুড় ঘন তরল। সাঘাটায় এখন লালির কদর সব জায়গায় তার পরিচিতি রয়েছে। দেশের নানা অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রি হয়। এছাড়া স্থানীয় লোকজন পিঠা খাওয়ার জন্য জমি থেকে গুড় ও লালি কিনে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে সাঘাটার চরাঞ্চলে আখের গুড় থেকে কৃষকের ভালো মুনাফা আসবে। আখের রসে তৈরি এই তরল গুড় দারুণ মুখরোচক, মুলত পিঠা-পুলি ও পায়েস তৈরিতেই আখের গুড়ের জুড়িনেই। এছাড়া চিড়া-মুড়ির সাথে খেতেও অনন্য আখের লালি। সাঘাটা উপজেলায় প্রতি শীত মৌসুমেই গুড় তৈরি করেন স্থানীয় চাষি পরিবারগুলো। বছরের চার মাস গুড় তৈরি করে বাড়তি টাকা আয় করেন তারা। গুড় তৈরি কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আখের মৌসুম ধরা হয়। এই সময়টাতেই শীতের মাত্রা বেশি থাকে। এর ফলে এই চার মাস সাঘাটা উপজেলায় উৎপাদিত আখ থেকে গুড় তৈরি করেন স্থানীয় চাষিরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লালি ও গুড় তৈরির কাজ। প্রতি কেজি লালি পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। আর ৭শ গ্রামের প্রতিটি পিচ গুড় বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।এতে স্বাদ বাড়ানো বা রঙ হেরফের করতে বাড়তি কোনো কিছুই এই গুড়ে ব্যবহার করা হয় না।
সরেজমিনে উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নে হাসিলকান্দি চরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা স্যালো মেশিনের সাহায্যে আখ মাড়াইয়ের কাজ করছে। কৃষকরা জানায় দিনভর আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহের পর সেই রস চুলায় জ্বাল দেয়া হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় জ্বাল দেয়ার পর একসময় বালুরমত দানা হয়। দানা গুলো আবার ওজন করে করা হয় দলা করে মুঠা গুড়ে পরিনত করা হয়।
হাসিলকান্দি গ্রামের আখ চাষি আফতাফ হোসেন সরকার জানান, চলতি মৌসুমে তিনি চরের পরিত্যাক্ত ২ একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। এই আখ দিয়ে যে পরিমাণ লালি ও গুড় তৈরী হবে, তা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে তাঁর। আজিজার রহমান নামে গুড় তৈরীর কারিগর বলেন, আগে গুড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। এখন পাইকাররা জমিতে এসে লালি ও গুড় দুটোই কিনে নিয়ে যান। এ বছর লালি ও গড় বিক্রি করে অনেকটাই লাভবান হবেন এমনটাই আশা করছেন সে। প্রতিবছর শীতের সময়টাতে লালি ও গুড়ের ব্যবসা করে ভালো টাকা আয় হয়। এতে করে পরিবারের অভাব-অনটন দূর হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে । চিনির মিল বন্ধ থাকার কারেণে চাষিরা নিজেরাই মাড়াই শুরু করেছে। আখমাড়াই করে রস এবং রস জ্বাল করে লালি ও গুড় তৈরী করে তা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে চাষিরা । একারণে এখনও কিছু কৃষক ঐতিহ্য হিসেবে আখ চাষ করছেন।