জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ►
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট এর উদ্ভাবিত বারি-১৪ ,বারি- ১৭ ও বারি -১৮ উন্নত জাতের সরিষা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। অল্প খরচে বেশি ফলন দামও বেশি পাওয়ায় উচ্চ ফলনশীল নতুন এ জাতের সরিষার চাষে এবার আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা। এ জাতের সরিষার বেড়ে উঠা গাছ, ফুল আর লম্বা পুরো শীষ দেখে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরনে চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৬৪ হেক্টর ৬ বিঘা জমিতে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ফলন বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
আর কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ,বারি- ১৭ ও বারি -১৮ জাতের সরিষা চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে মনে করছে এই বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষা থেকে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।
বুধবার গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্ত উপজেলার বিভিন্ন মৌজার সরিষার ক্ষেত পরিদর্শন করেন। এসময় উদ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মকর্তারা জানান, অতীতে বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে উৎপাদনে সময় বেশি ও ফলন কম হওয়ার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষের প্রতি অনেকাংশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ছিলো।
তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এর উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা তুলে নিয়ে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়।
উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের কোমলপুর গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট এর সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পরামর্শে গত বছর উচ্চ ফলনশীল সরিষার আবাদ করে কম খরছে মুনাফা বেশি হওয়ায় এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বারি-১৭ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
সরিষার গাছ অনেক ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন বাম্পার ফলন হবে। উপজেলার গোরেরপাড়া গ্রামের চাষি মুকুল বলেন, এর আগে প্রতি বিঘা জমিতে ২ থেকে ৩ মণ সরিষা পাওয়া যেত এখন কৃষি গবেষণা ইসিষ্টিটিউট এর কর্মকর্তাদের পরামর্শে তারা উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করে গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা পাওয়া যায়। এবার আরও ভালো ফলন পাবেন বলে তারা আশা করছেন। তা ছাড়া সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভালো হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয় ।
এ ব্যাপারে সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান বলেন, ‘কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪, বারি -১৭ ও বারি- ১৮ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এবারের ফলন ভাল হলে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।
গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট-এর প্রধান বেজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরনে গবেষণা করে উচ্চ ফলনশীল তেল জাতীয় শস্য বীজ উদ্ভারন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত সরিষা, সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরা অধিক মুনাফা পেয়েছে। আগামীতে উচ্চ ফলনশীল এই জাতের সরিষা চাষের প্রতি কৃষক উদ্বুদ্ধ হলে একদিকে যেমন কৃষক অধিক মুনাফা পাবে অপর দিকে স্থানীয় ভাবে মানুষের ভোজ্য তেলে চাহিদাও পুরন হবে।