সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আগুনের রহস্য দশ দিনেও উদ্ঘাটন হয়নি
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ► সৈয়দপুর বিমানবন্দর রানওয়ের ঘাসবনে রহস্য জনক আগুনে পুড়ে গেছে ৫০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। এমনকি আগুন থেকে রক্ষা পায়নি বিদ্যুৎ লাইনের ৩০০ মিটার মূল্যবান ক্যাবল (তার)। গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে এ আগুনের ঘটনা ঘটলেও দশ দিন পেরিয়েও উদ্ঘাটন হয়নি রহস্য, গঠন করা হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে চলছে নানা ফন্দিফিকির। দেশের ব্যস্ততম অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে এমন ঘটনায় বিস্মিত হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিমানবন্দর রানওয়ে এলাকা সংরক্ষিত হওয়ায় সাধারণের নজর এড়িয়ে যায় দুর্ঘটনাস্থল। কিন্তু বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরাদের আলোচনায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জানতে পারেন মিডিয়া কর্মীরাও। আগুনের ঘটনার বিষয় নিয়ে কথা হয় বিমানবন্দরের একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমানবন্দর রানওয়ের ঘাসবনের ঘাস পরিষ্কার করার জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঘাস কাটার জন্য ঠিকাদারও নিযুক্ত করেছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লোব কুমার ঘোষ নিয়ম ভেঙে নিজে সাব কন্টাক্ট নেন। তিনি ঘাস না কেটেই চুক্তির টাকা আত্মসাৎ করতে ঘাসবনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ঘাস পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন। বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক তার বিশ্বস্ত কর্মচারী দিয়ে ঘাসে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে রানওয়ের ৫০ হাজার বর্গ মিটার এলাকার ঘাস পুড়ে যায়। একইসাথে বিদ্যুতের ৩০০ মিটার মূল্যবান ক্যাবল (তার) আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন অবস্থায় আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে বিমানবন্দরে কর্মরত ফায়ার ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর ফলে বিমানবন্দর চত্বরের অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ রক্ষা পায়। এদিকে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লোব কুমার ঘোষ বাগান করার নামেও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে পুরো টাকাটাই পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে কালোবাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির অভিযোগ। বিমানবন্দর রানওয়ে সার্বক্ষণিক নজরে রাখার জন্য দুটি গাড়ি আছে। এর মধ্যে একটি গাড়ি সবসময় অচল পড়ে থাকে। কিন্তু ওই ব্যবস্থাপক দুটি গাড়ির বিপরীতে জ্বালানি কিনেন। অথচ জ্বালানি ব্যবহার হয় একটি গাড়িতে। অন্য গাড়ির নামে বরাদ্দকৃত তেলের পুরোটাই তিনি কালোবাজারে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন। হাতিয়ে নেয়া টাকার পরিমাণ বছরে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা বলে দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। দপ্তরে কর্মরত ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য মতে, বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক তার অপকর্ম ঢাকতে সব সময় অধস্তনদের সঙ্গে চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে দুর্ব্যবহার করেন। তারপরেও কেউ কোনোভাবে তার কথার প্রতিউত্তর করলে তিনি বদলির হুমকি দেন। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায় না। ফলে দিন দিন ব্যবস্থাপকের অনিয়ম- দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কথা হয় বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লোব কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে যা কিছু লিখবেন জেনে-বুঝে-শুনে লিখলে সুবিধা হবে। তাঁর কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংবাদকর্মীরা বিমানবন্দর রানওয়ে পরিদর্শন করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এমতাবস্থায় বিস্তারিত জানতে চাইলে আমি এখন অনেক ব্যস্ত, পরে কথা বলা যাবে বলে এড়িয়ে যান এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
নিউজটি শেয়ার করুন