Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৯-৭-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:০৮

সাঘাটায় ভয়ংকর রহস্যে ঘেরা পাগলাখালীর পাকুড় গাছ

 সাঘাটায় ভয়ংকর রহস্যে ঘেরা পাগলাখালীর পাকুড় গাছ

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ► 

সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা মৌজায় প্রায় ৩ শতাব্দীর ভয়ংকর রহস্যে ঘেরা পাগলাখালীর পাকুর গাছটি দিব্যি দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে আসছে প্রবীনতার কালের স্বাক্ষী হিসেবে। এই পুরানো পাকুড়গাছটির ঝড় তুফানে ক্ষতি করতে পারেনি। যতবড় ঝড়তুফানই হোকনা কেন এই গাছের ডালপালা ও পতারও কেনো ক্ষতি হয়না বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় অনেক বয়ষ্ক লোকজন জানান, তারা জন্মের পর থেকে এই পুরাতন গাছটি এমনই দেখে আসছেন। এখনও সেরকমই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আব্দুল বাকী (৭৫) বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে শুনে আসছি এই পাকুড়গাছটি অনেক অনেকদিন আগের। এর বয়স কমপক্ষে ৩০০ শত বছর হবে। লোক মুখে শোনা যায়, এই গাছের নীচে অনেক পাগল আসে আবার চলে যায়। বহু বছর আগে এখানে পাগলের আনা-গোনা বেশী থাকায় লোকজনের কাছে স্থানটি পাগলাখালী নামে পরিচিত পায়। এথেকেই এখানকার নমকরণ হয় পাগলাখালী। এখননো পাগলাখালী এই পাকুড় গাছের নিচে পাগল আসে তারা ২/১ দিন থেকেই চলে যায়। 

সাঘাটা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কি: মি: দক্ষিণ পূর্ব দিকে ডাকবাংলা থেকে প্রায় আধা কি:মি: উত্তরে, উল্যা ভরতখালী থেকে ১২ কি:মি: দক্ষিণে এবং সাঘাটা থানা থেকে মাত্র দেড় কি:মি: পশ্চিম দিকে জুমারবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কে ঝাড়াবর্ষা মৌজায় ঘুড়িদহ বিলের ওপর এই পাকুর গাছটি অবস্থিত । পাগলাখালীর এই পাকুড় গাছকে ঘিরেই শোনা যায় ভয়ংকর নানা গল্প কাহিনি। কথিত আছে রহস্যময় ওই গাছের ডাল-পাল ও পাতাও কেউ ভাংতে বা ছিড়তে পারে না। ভয়ংকর জাগ্রত গাছের পার্শ্ববর্তী রাস্তাটিই জুমারবাড়ী-গাইবান্ধা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে রাতে চলার সময় ভয়ে শরীর শিউরে লোম খাড়া হয়ে ওঠে। তখন মনের মঝে ধুকধুক করতে থাকে।

ঝাড়াবর্ষা গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৮৫) জানান, এই গাছে গায়েবি কিছু আছে একারণে এ গাছের কাছ থেকে কোনো কোনো রাতে হাতি ও শুয়োর দেখা যায়। সামাদ (৭৫) জানান অনেক দিন আগে এক ব্যক্তি গভীর রাতে ওই সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় লাশ নিয়ে মাওলানাদের জানাজা করতে দেখেছে। আবার অনেক দিন আগে বিয়ে যাওয়ার সময় ৭টি গরুর গাড়ী এখানে এসে হঠাৎ থেমে যায়, গাড়ি সামনে যেতে পারেনি, পরে স্থানীয় লোকজ উপস্থিত হয়ে ওই গাছের কাছে গিয়ে অনুরোধ জানালে বিয়ের গাড়ী গুলো ছেড়ে দেয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন জানান, নয় শতক দেবোত্তর সম্পতির ওপর দাড়িয়ে থাকা এই গাছটি বিষয়ে বাপ দাদা সহ পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে অনেক ভয়ংকর গল্পই শোনা গেছে, তার  মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা শোনা যায় সৈয়দ আলী ব্যাপারী এই এলাকার একজন প্রভাবশালী লোক ছিলেন, তার ছিলো ইট ভাটা, সেই ভাটার ইট পোড়ার কাজে ব্যবহারের জন্য স্থানীয় গেন্দা নামে এক কাঠ মিস্ত্রিকে এনে ওই গাছের একটি ডাল কাটার সাথে সাথে মিস্ত্রির ছেলের নাক,মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে মারা গেছে।

প্রভাবশালী সৈয়দ আলী এবং মিস্ত্রি গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে নিরুপায় হয়ে গাছের কাছে অনেক কিছু মানস করে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মিস্ত্রি সে সময় প্রাণে রক্ষা পেছে ছিলো। তিনি আরও জানান, ৩/৪ বছর আগেই এই গাছের পাশে ঘুড়িদহ বিলের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য পাথরের ট্রাক এখানে। ওই ট্রাকের ড্রাইভার না জেনে রাতে ওই গাছের নিচে পায়খানা করতে গেলে একটি ঘোড়া তাকে ধাওয়া করেছে।

হবিবর রহমান (৭৮) জানান, এই গাছের পাশে নদীভাঙ্গনে গৃহহারা একলোক এসে বাড়ি করে ছিলো। রাতে ওই বাড়ি-ঘর ধরে টানা হেছড়া এবং বিভিন্ন ধরণের হতো। তখন ওই বাড়ির লোকজন ভীষণ ভয় পেত। ভয় সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা অন্যত্রে চলে গেছে। স্থানীয় আবু তালেব জানান, ওই দিক দিয়ে মোটরসাইকে যোগে যাওয়ার সময় একাই মারাত্মক দুর্ঘটনায় তার এক পা ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। একই দুর্ঘটনার কথা জানান লিপটন নামে ওপর এক ঠিকাদার। এছাড়াও এই গাছের পাশে সড়কে বিনা কারণেই ছোট-বড় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন দুর্ঘটনায় লোকজন আহত নিহত হয়েছে।

স্থানীয় রশেন্দ্র নাথ বর্মণ (৬৬) জানান, আগে থেকে শুনে বাপ-দাদার মুখে শুনেছি বহু বছর আগে এই এলাকায় সোনাতন ধর্মের লোকজনের বসবাস বেশী হওয়ায় তারা এই গাছের নিচে শীতলি মাতা ও ছোট মাতাজি পূজা দিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাপ-দাদারাও এখানে পূজা দিতেন, এখানে পাঠাবলি হতো। হিন্দু কোনো পরিবারের লোকজন বড় ধরণের অসুস্থ্য হলে বা বিপদ আবদ দেখা দিলে তারা এখানে পূজা বা কোনো কিছু দেওয়ার জন্য মানস কনতো, এতে তারা রক্ষা পেত।  

কালের বির্বতনে এখানে পূজা এবং পাঠাবলি না হলেও এখনও স্থানটি জাগ্রত আছে। লোকজন এখনো কবুতর,তেল-সেদুর দিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, গরুর মাংস খেয়ে এখনও মানুষ ওই গাছের ধারের কাছেও পৌঁছিতে পারেনা। গরুর মাংস খাওয়া মানুষ সেখানে গেলেই তার বিপদ হয়। এই পাগলাখালীস্থান বা পাবুড়টিকে যারা অবহেলা করে, তারা বিপদের সম্মূখীন হয়।এছাড়াও আরো অনেক ভয়ংকর গল্প-কাহিনি শোনা গেছে পাগলাখালীল এই পাকুর গাছ সম্পর্কে। রহসে ঘেরা ভয়ংকর গাছটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসে লোকজন। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad