• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৬-৫-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:৪৬
  • ৪৬ বার দেখা হয়েছে

সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের শেষ আশ্রয় তথ্য আপা

সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের শেষ আশ্রয় তথ্য আপা

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ ►

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের পিছিয়ে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়াসহ সকল শ্রেণির নারীরা যেন বিনামূল্যে যেকোন সেবা গ্রহণ করে নিজেদের সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী করতে পারে সেই মিশন গ্রহণ করেছে সরকার। আর সেই মিশনকে শতভাগ সফল করতে সরকার “শেখ হাসিনার বারতা, নারী-পুরুষ সমতা” এই প্রতিপাদ্য বিষয়ে সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে দেশের প্রতিটি উপজেলায় জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে চালু করেছে তথ্য আপা কেন্দ্র।

দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে নারীদের কাছে গিয়ে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যসেবা পৌছে দেয়ার মাধ্যমে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীর দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে কাজ করে আসছে তথ্য আপা। প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ের অংশ হিসেবে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ২০১৮সালের নভেম্বর মাসে তথ্য আপা কেন্দ্র তার কার্যক্রম শুরু করে। সেই সময় থেকে এই কেন্দ্র থেকে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদান, বিনামূল্যে চাকরির আবেদনপত্র পূরণ, ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল দেখা, ই-মেইল, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপির সাহায্যে যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা, ইত্যাদি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান, আইনী সহায়তার পরামর্শ প্রদান, মহিলাদের ডাায়াবেটিকস পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা, তাপমাত্রা, ওজন মাপা, গ্রামীণ নারীদের উৎপাদিত ও সংগৃহিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য www.laalsobuj.com মার্কেটপ্লেস পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে চলতি মে মাসের ২৫তারিখ পর্যন্ত উপজেলার ২৯হাজারের বেশি সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীরা সেবা গ্রহণ করেছে। 

উপজেলা তথ্য আপার কেন্দ্র থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে কি কি তথ্য সেবা পাওয়া যায়। নারীরাও ঘরে বসে কিভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল তথ্য খুব সহজেই পেতে পারেন, পিছিয়ে পড়া নারীরা যে এখন আর কোন অবহেলিত অঙ্গ নয়, কিভাবে নারীরাও সরকারের দপ্তর থেকে বিভিন্ন সেবা বিনামূল্যে গ্রহণ করে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন এবং নারীদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারের গ্রহণ করা নানা পদক্ষেপ বিষয়ে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে বর্তমান সরকারের গ্রহণ করা নানা পদক্ষেপগুলোকে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ প্রতিটি নারীদের মাঝে পৌছে দিতে ও নারীদের তথ্য জানার ক্ষেত্রে সচেতন করতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশেষ উঠান বৈঠক। যে সকল উঠান বৈঠকে ওই গ্রামগুলোর শত শত নারীরাই দর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ করে তথ্য আপার সেবা গ্রহণ করে আসছেন। 

সেবা গ্রহিতা কাশিমপুর ইাউনিয়নের সর্বরামপুর গ্রামের লায়লা আক্তার বানু বলেন গরীব বাবা যৌতুক দিতে না পারায় স্বামীর সংসার করা হয়ে ওঠেনি। পরে আমি তথ্য আপার মাধ্যমে সরকারি ভাবে হাঁস-মুরগী পালনে প্রশিক্ষণ শেষে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে পারিবারিক ভাবে হাঁস-মুরগী পালন করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। ছেলেকে পড়ালেখা করানোর পাশাপাশি গরীব বাবার সংসারেও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে পারছি। বিনামূল্যে সরকারের সেবা গ্রহণ করে আমার হতাশাগ্রস্থ জীবনে পেয়েছি সফল হওয়ার ও ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। 

উপজেলা তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা (তথ্য আপা) জেবুন নেছা বলেন এই প্রকল্পটি চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হচ্ছে। এই প্রকল্পটি রাজস্ব খাতের আওতায় আনা হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি নারীকে স্মার্ট নারীতে রূপান্তর করতে আরো সহজ হবে। আমরা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কিভাবে স্মার্ট মোবাইলের মাধ্যমে যে কোন বিষয়ে জরুরী সেবা পাওয়া যেতে পারে, বিভিন্ন চাকরীতে নারীদের আবেদন করার নিয়মাবলী, আবেদনপত্র দাখিল করা, উপজেলা প্রশাসনের কোন দপ্তর থেকে কোন কোন সেবা কিভাবে পাওয়া যায় সেই তথ্য সরবরাহ করা, সরকারের প্রদান করা বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার নিয়মাবলী জানা, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার কৌশল জানা, কোন নারীরা কোন ধরনের সেবা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে পেতে পারেন সেই বিষয়ে অবগত করা, সরকারের প্রদান করা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এই রকম শত শত সেবা বিনামূল্যে প্রদান করে আসছি।  

এছাড়া কোন মহিলা কোন সমস্যায় পড়লে বিষয়টি তথ্য আপাকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওই মহিলার কোন ধরনের সহায়তার প্রয়োজন সেই বিষয়গুলোও নিশ্চিত করে তাৎক্ষণিক ভাবে ওই মহিলার জন্য সেবা প্রাপ্তির বিষয়গুলোও নিশ্চিত করে আসছি। তথ্য আপার মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া হাজার হাজার নারীদের জীবনধারা পাল্টে গেছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটি শেষ না করে দ্রুত রাজস্ব খাতে অর্ন্তভুক্ত করার কোন বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন সরকারের অত্যন্ত সফল এক পদক্ষেপ এই তথ্য আপা প্রকল্পটি। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের নতুন উদ্দ্যোমে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক, জনগুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় এক প্লাটফর্ম হচ্ছে উপজেলা তথ্য আপার কেন্দ্র। বলা যেতে পারে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের আরেক বাবা-মা হচ্ছে এই উপজেলা তথ্য আপা কেন্দ্র। একজন অসহায় ও গরীব নারীকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে তথ্য আপা কেন্দ্রের তথ্য আপার ভ’মিকার কোন বিকল্প নেই।

তথ্য আপার দুয়ারে গেলেই যে কোন নির্যাতিতা, স্বামী পরিত্যাক্তা, অসহায় নারী নতুন করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়ে যাবেন। আর এমন মানবিক ভাবনা থেকে তথ্য আপা কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে সেবা প্রদানের সিদান্ত গ্রহণ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবিক জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাবনায় সব সময় দেশ ও দেশের মানুষ। এমন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ব্যতিত লাল সবুজের বাংলাদেশে এমন উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। আগামীতেও নারীদের এগিয়ে নিতে তথ্য আপা কেন্দ্রকে প্রকল্প হিসেবে নয় রাজস্ব খাতের আওতায় এনে স্থায়ী ভাবে সেবা প্রদাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাদের লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানাবো। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়