Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১২-৮-২০২৩, সময়ঃ রাত ০৭:৫১

রাণীনগরে এসএসসিতে দুই মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী

রাণীনগরে এসএসসিতে দুই মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি ►

মানের পরীক্ষায় পাশের হারে নওগাঁর রাণীনগরের মাদ্রাসাগুলো অনেকটাই শূণ্যের কোঠায়। কোন মাদ্রাসা থেকে একজন, কোন মাদ্রাসা থেকে দুইজন আবার কোন মাদ্রাসা থেকে তিনজন শিক্ষার্থী কোনমতে পাশ করেছে। এতে করে স্ব স্ব এলাকার অভিভাবকদের মাঝে দীর্ঘদিনের ঘুনে ধরা মাদ্রাসার পাঠদানের ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর তদারকি ও নজরদারীর মাধ্যমে পরীক্ষার কেন্দ্রের সকল অনিয়মকে বন্ধ করে সঠিক নিয়মের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ করায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ টনক নড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এই ধারাটি অব্যাহত রাখা গেলে সঠিক ভাবে পড়ালেখার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ শেষে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাওয়ার রেওয়াজটি পুনরায় চালু হওয়ার পাশাপাশি মেধাবীদের মূল্যায়নের পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে এবং পাঠ্যপুস্তুক পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে এমনটিই মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল। 
    
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এমপিও ভুক্ত মোট ৭টি মাদ্রাসা রয়েছে। দেশের মানুষের মাঝে না পড়ে সহজেই মাদ্রাসা থেকে পাশ করা যায় এমন ধারণা বহুদিনের। আর সেই ধারণাকে মনে প্রাণে ধারণ করার কারণে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চরম ভাবে ধরা খেয়েছে উপজেলার ৬টি মাদ্রাসা ও তার শিক্ষার্থীরা। সদ্য ফলাফল প্রকাশিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার রাজাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও এ- বিভাগ নিয়ে পাশ করেছে মাত্র ১জন, ভেটি আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করেছে মাত্র ১জন, পাঁচুপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে ২২জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করেছে মাত্র ২জন, আবাদপুকুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করেছে ৩জন, আল আমিন দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করেছে মাত্র ৪জন, পারইল মাদ্রাসা থেকে ১৯জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করেছে মাত্র ৬জন। এই সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন করা, প্রতিষ্ঠানে ফেল হওয়া বিষয়ে শিক্ষক না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যাকে ফলাফল খারাপ হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন।  

আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার শরীফ উদ্দিন মাজাহারি বলেন চলতি বছর পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করার কারণে ফলাফলে এমন ধ্বস নেমেছে। কেন্দ্র পরিবর্তনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভয়ের কারণে পরীক্ষায় ভালো করে লিখতে পারেনি আবার নতুন কেন্দ্রে আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি কটোর হওয়ার কারণে পরীক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে লিখতে না পারার কারণে এমন ফলাফল হয়েছে।

রাজাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালাম জানান, আমার মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে খারাপ করার কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত প্রতিষ্ঠানে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক নেই। সম্প্রতি গণিত বিষয়ে এক মহিলা শিক্ষক মাদ্রাসায় যোগদান করার পরই বিএড করার কারণে ছুটিতে আসেন। এমন অবস্থায় এই দুই বিষয়ে সঠিক ভাবে পাঠদান না করার কারণে এবার ফলাফলে এমন ধ্বস নেমেছে।   

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কামরুল হাসান বলেন দীর্ঘদিন পর উপজেলায় কঠোর নজরদারী ও তদারকির মাধ্যমে স্বজনপ্রীতিকে উর্দ্ধে রেখে নিয়ম মাফিক ছকের মধ্যে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করায় বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। শতকরা ফলাফল একটু কম হলেও উপজেলাবাসী জেনে গেছেন যে পরীক্ষায় আর অসৎ পন্থা অবলম্বন করার সুযোগ নেই। আর মাদ্রাসায় সঠিক ভাবে পাঠদান না করার পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পন্থায় গড়েও তোলা হয় না। যার ফলে পরীক্ষার কেন্দ্রে একটু কড়াকড়ি করা হলেই মাদ্রাসার ফলাফলে ধ্বস নামে। মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই রেওয়াজ থেকে বের করে নিয়ে আসতে হলে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। পরীক্ষা যতই কঠিন নিয়মের মধ্যে গ্রহণ করা হোক না কেন যদি একজন শিক্ষার্থীকে সঠিক নিয়মের মধ্যে পাঠদান করানো হয় সেই শিক্ষার্থী অবশ্যই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করবে এটি শতভাগ সত্য। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন সকল অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিকে উপেক্ষা করে আমি চেস্টা করেছি শতভাগ সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য। এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সকলের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিয়মের বেড়াজালকে ছিঁড়ে একটি সুস্থ্য পরিবেশে সঠিক ভাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষা গ্রহণের চেস্টা করে আসছি। আমি আশাবাদি আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad