Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৪-৫-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:২২

বিলুপ্তপ্রায় গরুর হাল

বিলুপ্তপ্রায় গরুর হাল

কঙ্কন সরকার ►

বৈশাখের চরম গরমে একটু গাছের ছায়ার খোঁজে বিলের রাস্তা ধরে খানিকটা এগিয়েই পেয়ে যাই। যেখানে অবশ্য প্রায়ই যাই। অনেকেই আসে এখানে। জায়গাটা বেশ কিছু গাছ ও বাঁশ দিয়ে ঢাকা। যত গরমই হোক এর শীতল ছায়ায় প্রশান্তি আনে। সেইদিন এ অঞ্চলেও ৩৮—৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছিল।

তবুও তার মধ্যেই গরুর হাল বইছেন এক হালচাষী। যাকে হালুয়া বলে সুন্দরগঞ্জ এলাকায়। লালরঙা গরু দুটো তপ্তরোদে যেন উজ্জ্বল রঙা হয়ে উঠছিল। যদিও মায়া লাগছিল এই প্রখর রোদে সে জোয়াল কাঁধে নিয়ে লাঙল টানছে। চোখে পড়তেই কাছে যাই কৌতূহলে। কেননা, সেই প্রাচীন কাল থেকে কৃষির অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ গরুর হাল এখন বিলুপ্তির পথে। কালেভদ্রে হঠাৎমঠাৎ চোখে পড়ে কোথাও কোথাও। ভাগ্যিস ফোনটা সাথে নিয়েছিলাম। ছবি উঠালাম কয়টি। গরুর হালে প্রধান উপকরণ দুটি গরু।

গরুর কাঁধে থাকে জোয়াল। জোয়ালের সাথে থাকা দড়িগুলোর নাম যুক্তি ও হাল ল্যাংড়া। মুখে থাকে বাঁশের টোপা। অবশ্য দড়ি দিয়েও সেই টোপা বানানো যায়। জোয়ালের মাঝে থাকে লাঙলের ঈশ। আর মাটি খুঁড়ে চাষ করার জন্য লাঙলের উপরে লোহার ফলা বসানো হয়। ফলাকে খেইলন্যা বা ফালও বলে। লাঙলের অপর মাথায় বাঁশ কেটে লাগানো হয়। যেখানে একটি ছোট্ট খিল লাগানো হয়। বাঁশের অংশটিকে বাশা ও লাগানো বাঁশের খিলের মত টুকরাটিকে মুঠিয়া বলে। যা ধরে লাঙ্গলকে পরিচালনা করা হয়। আর থাকে মই। যখন প্রয়োজন হয় তখন লাঙ্গল সরিয়ে মই লাগানো হয়। মই বইয়ে জমি সমান করা হয়।

গরুকে সঠিক পথে চালিত করতে হালুয়ার হাতে থাকে লাঠি যাকে হালুয়া পেণ্টি বলে। হাল বওয়ার সময় হালুয়ার মুখ থেকে হরেক শব্দ বের। যেমন— হ হ হ..., হেইট হেইট... ইত্যাদি। জমিতে হাল দেওয়ার পর কয়দিন ফেলে রাখা হয় কখনো কখনো। যাকে জাবর দেওয়া বলে। হাল দেওয়ার ধরনেরও নাম আছে। প্রথম একবার চাষকে একশির বলে। তেমনি করে দুবারকে দুইশির,  তিনশিরকে তিনশির বলে। আগে গার্হস্থ্য বাড়িতে হাল থাকতো। কারও কারও দুই জোড়া, তিন জোড়া, চার জোড়া পর্যন্ত ছিল।

এ হালের সংখ্যা দিয়ে অাভিজত্যও প্রকাশ পেত। অর্থাৎ যার হালের সংখ্যা যত বেশি সমাজে তার দাম তত বেশি! আবার কারো জমি নেই কিন্তু হাল ছিল। কারণ তিনি হাল বিক্রি করে আয় বা জীবিকা নির্বাহ করতেন। যেমন এখন একটা হাল দিনের হিসাবে দাম ছয়শ টাকা। আবার বর্গাচাষীও হাল রাখতেন। জমি বর্গা নিয়ে চাষ করার জন্য। অবশ্য ঘোড়া দিয়েও হালচাষ হয় বা হত। একটা ঘোড়া দিয়েও তা হয়। মহিষের হালের প্রচলনও ছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad