ফুলছড়ি প্রতিনিধি ►
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে শতাধিক পরিবারের যাতায়াতের সরকারি রাস্তা পুন:নির্মাণে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে দুইটি পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে তিন শতাধিক মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঠুর গ্রামের ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকারি ম্যাপের রাস্তাটি মাপযোগ করে পুণ:নির্মাণের নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরপরেই রাস্তা পুন:নির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদান করে অবৈধ দখলদাররা।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সরকারি ম্যাপে আধা কিলোমিটার রাস্তা থাকলেও অবৈধ দখলকারীদের কারণে চার দশক ধরে যাতায়াতের রাস্তা ছিল না দক্ষিণ কাঠুর গ্রামের তিন শতাধিক মানুষের। রাস্তা না থাকায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বর্ষাকালে তাদের এ দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। বেশ কয়েক বছর আগে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে অবৈধ দখলদারদের বাঁধার কারণে রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এনিয়ে আদালতে মামলাও করেন। আদালত রাস্তা নির্মাণে বাঁধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।
আদালতের নির্দেশনার পর সম্প্রতি ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টরা সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে সরকারি ম্যাপভুক্ত রাস্তাটি পুন:নির্মাণের নির্দেশ দেন। তাদের নির্দেশনায় ভুক্তভোগীরা নিজেদের টাকায় রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
কাজ শুরুর পর ওই রাস্তার পার্শ্বের জমির মালিক ও অবৈধ রাস্তা দখলদার পূর্ব ছালুয়া গ্রামের সাদেক আলী ও জয়নাল আবেদীন আবারও বাঁধা প্রদান করেন। এসময় তারা রাস্তার মাটি সরিয়ে ফেলেন ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা আবারও সংশ্লিষ্টদের স্বরণাপন্ন হলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অবৈধদখলকারী সাদেক আলী আর কখনও বাঁধা প্রদান করবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করেন।
২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় রাস্তাটিতে মাটি ভরাট করার সময় সাদেক আলী ও তার ভাগিনা রহিম বাদশা মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত মাটির সর্দার জহুরুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিনকে মারপিট করে। এসময় তাদের পোষাক, নগদ টাকা ও হিসাবের কাগজ ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষে সাদেক আলী ও রহিম বাদশা নিজেরাই খড়ের স্তুপে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা এবিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসন ও ভুক্তভোগীদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়।
এসব অপপ্রচার ও মারপিটের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে শনিবার বিকেলে (৪ মার্চ) ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীরা। সংবাদ সম্মেলনে মাটির সর্দার জহুরুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি পুন:নির্মাণের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আমার লোকজন রাস্তায় মাটি ভরাট করার সময় সাদেক আলী ও রহিম বাদশা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তারা আমার কাছে থাকা নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও মাটির হিসাবের কাগজ ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি এঘটনার সুষ্ঠ বিচার চেয়ে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ওই এলাকার ফইম উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন, মোস্তফা মিয়া, সাকিবুল ইসলাম, কামাল হোসেনসহ অনেকে।
অভিযুক্ত রহিম বাদশা বলেন, ‘তারা রাস্তা নির্মাণ করবে এতে আমাদের সমস্যা নাই। কিন্তু খড়ের স্তুপে আগুন লাগিয়ে অন্যায় করেছেন। আমরাও থানায় এবিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি কিন্তু পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে ফুলছড়ি থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এস.আই) সামিদুল্লা সরকার সামিদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। থানায় দুই পক্ষই অভিযোগ দিয়েছে। যাহা তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে পুলিশের পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ নেই।’