• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৪-১০-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ১২:০৯
  • ৯০ বার দেখা হয়েছে

নৌকার প্রচারণায় মুখর নওগাঁ-৬ আসন, একদফা আন্দোলনে অনড় বিএনপি

নৌকার প্রচারণায় মুখর নওগাঁ-৬ আসন, একদফা আন্দোলনে অনড় বিএনপি

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ

জাতীয় সংসদের ৫১নম্বর নির্বাচনী এলাকা হচ্ছে নওগাঁ-৬ আসনটি। জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি। এক সময় এই অঞ্চলটি সর্বহারা ও জেএমবিদের  সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে সারা বিশ্বের কাছে রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত পায়। এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে সেই রক্তাক্ত জনপদে বইতে শুরু করে শান্তির সুবাতাস। এক সময় এই আসনটি বিএনপির দখলে থাকলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের দখলে রয়েছে। 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যার যার মতো করে নিজের প্রার্থীর বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। সরকার দলেন প্রায় হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী সরাসরি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকলেই দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ধরে রাখার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ থাকলেও দলীয় বিভক্তি বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। অপরদিকে দলের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছে বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ)  মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে সরব রয়েছে। 

১৯৯১ ও ৯৬সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। এরপর ২০০১ সালে পুনরায় আলমগীর কবির বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলম। ২০০৬-০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেওয়ায় আলমগীর কবিরের আপন ছোট ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু বিএনপির হাল ধরেন।  তিনি নতুন করে দলকে সু-সংঘটিত করার শুরু করেন। 

২০০৮সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলুকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের ইসরাফিল আলম বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন ইসরাফিল আলম। ২০১৮ সালে আবারও বিএনপিতে যোগ দেয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরকে হারিয়ে আসনটি দখলে রাখেন ইসরাফিল আলম। এদিকে ইসরাফিল আলম গত ২০২০সালের ২৭জুলাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর উপ-নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলালকে নৌকার মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচিত হন। 

বর্তমানে এই আসনে এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগম শাহিন মনোয়ারা হক, সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের সহধর্মিনী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুলতানা পারভীন বিউটি, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. ওমর ফারুক সুমন, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. মো: ইউনুস আলী প্রামাণিক, আবাদুপুকর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিএম মাসুদ রানা জুয়েল, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আরিফ রাঙ্গা ও আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব।

বর্তমান সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন আমি উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দুই উপজেলার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে অবস্থিত নামে-বেনামে বিভিন্ন সমিতির নামে যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ করেছি। বিভিন্ন এলাকার আতিনেতা-পাতিনেতাদের দৌরাত্ম বন্ধ করেছি। এতে করে কিছু অসৎ শ্রেণির নেতাকর্মীদের কাছে আমি খারাপ হলেও স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষদের মাঝে। এমন কর্মকান্ড থেকে আমি শতভাগ আশাবাদি যে এবারো মাননীয় নেত্রী আমাকেই নৌকার মাঝি হিসেবে চূড়ান্ত করবেন। 

সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুলতানা পারভীন বিউটি বলেন এই অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার নাম ছিলো ইসরাফিল আলম। বর্তমান এমপি জনবিচ্ছিন্ন এক এমপি। তাই প্রধানমন্ত্রী যদি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি এমপি নির্বাচিত হয়ে আমার স্বামীর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে জীবন বাজি রেখে জাতির পিতার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। যদি জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি বিজয়ী হয়ে এই অঞ্চলের প্রতিটি অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সুফল পৌছে দিতে কাজ করবো। শুধু মুখে নয় নতুন করে মানুষের হৃদয়ে জাতির পিতার আদর্শকে গেঁথে দেয়ার কাজে আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

আবাদুপুকর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিএম মাসুদ রানা জুয়েল বলেন আসন্ন নির্বাচনে যদি তৃণমুলের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে আমি শতভাগ আশাবাদি মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি এগিয়ে থাকবো। আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর বিজয়ী হয়ে এই আসনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল হযবরল অবস্থাকে দূর করার মাধ্যমে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবো।

ফাটাকেষ্টো নামে পরিচিত সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আরিফ রাঙ্গা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ ও লালন করে ১৯৯৩সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। আজও জাতির পিতার আদর্শকে পুজি করে রাজনীতি করছি। প্রধানমন্ত্রী তার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মেধাবী, শিক্ষিত ও দক্ষ নেতৃত্বই নিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে আমি শতভাগ আশাবাদী আমিই নৌকার মাঝি হবো।

অপরদিকে নিজেদের দাবী আদায়ের পর নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবির, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজু শেখ ও আমিনুল হক বেলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু এবং জেলা তাঁতী দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব মো: এছাহক আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন আমি এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তাই এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষরা আমাকে ভালো করে চিনেন ও জানেন। দলের দু:সময় থেকে এখন পর্যন্ত এই আসনে বিএনপির হাল ধরে আছি। তাই দাবী আদায়ের পর যদি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আমিই ধানের শীষ প্রতিক পাবো বলে শতভাগ আশাবাদি।

কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব মো: এছাহক আলী বলেন এই আসনটি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার কোন বিকল্প নেই। আমি রাণীনগরের সন্তান। দলের প্রতিটি সংগ্রাম ও আন্দোলনে তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত রাখতে বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে আসছি। তাই প্রতিটি বিএনপি সমর্থিত মানুষের কাছে আমি একটি পরিচিত মুখ।

এছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে রাণীনগর উপজেলার সভাপতি আব্দুস সালাম দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী দল থেকেও অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। 

নওগাঁ-৬ আসনের রাণীনগর উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৫৪টি। পুরুষ ভোটার ৮০৪৯৮জন এবং মহিলা ভোটার ৭৯১২২জন। আত্রাই উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্র ৬০টি। পুরুষ ভোটার ৮৪৮১৮জন ও মহিলা ভোটার ৮২৭৯৫জন এবং হিজড়া ভোটার ২জন।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়