• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩-২-২০২৪, সময়ঃ সকাল ০৯:১২
  • ৫৬ বার দেখা হয়েছে

দেখতে সুন্দর কুমকুম

দেখতে সুন্দর কুমকুম

কঙ্কন সরকার

কিছু সুন্দর আড়ালেই থেকে যায় চোখ রাঙানো কিছু সুন্দরের ভিতরে! হয়তো চোখ সেথায় পড়লেও তার সৌন্দর্যটা অনুভব করার দৃষ্টিটা পড়ে না। সে আদুরে হয়ে উঠতে পারেনি! সেই দলের একটি কুমকুম ফল। যার ফুলের চেয়ে ফলের সৌন্দর্যই আকর্ষণীয়! 

বৃটির নাম কামেলা বৃ বা লাল কামেলা বৃ বা কুমকুম বৃ। আর সৌন্দর্যে আকর্ষণীয় ও প্রাকৃতিক রঙের উৎস এই ফলের নাম কুমকুম ফল/গোটা। একে অঞ্চল ভেদে কমল, লাল কমল, গুটি, লাল গুটি, সিন্দুর ফল/ গুটি, সিন্দুরী ফল নামে ডাকা হয়। এছাড়াও স্থানভেদে আরো অনেক স্থানীয় নাম আছে। প্রাকৃতিক রঙের উৎস হলেও গাছটির কাঠের মান উৎকৃষ্ট মানের না হওয়ায় ও এর মূল্যমান কম হওয়ায় গাছটি অনাদরে পড়েছে। ফলত আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। এক সময় গাছটির কাঠ ঘরের চালা তৈরির জন্য রুয়া-বাতি-পাড় ও দরজা জানালার চৌকাঠ কিংবা চৌকি-খাট-চেয়ার-টেবিল বানাতে ব্যবহার হলেও আজকাল শুধুমাত্র জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার আছে। 

ফলে অনাদরে পরিণত হচ্ছে গাছটি। মাঝারি উচ্চতার কাষ্ঠল বৃটি আগে জঙ্গল, বন-বাঁদাড়, ভিটে, রাস্তার ধার সহ যত্রতত্র দেখা মিললেও এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা গাছটির জন্য আলাদা যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। এ গাছে ফুল আসে হেমন্তে। হলুদে ধুসর বর্ণের মুকুল কিছুটা ঘ্রাণ ছড়ায় ও মৌ প্রজাপতিদেরও আকর্ষণ করে। মুকুল ফলে পরিণত হয় মাঘ ফাল্গুনে। আর ফাল্গুনে ফল বা গুটি গুলি অনেকটা লালচে হয়ে সৌন্দর্য ছড়ায়। এখনো যেখানে এ গাছ আছে এ সময়ে তাকালে দেখা যাবে ফলগুলো সবুজ পাতার ওপরে আঙুরের ঝোপার মতন হয়ে লাল আভা ছড়াচ্ছে। দেখলে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবেই! আর এ রঙিন আকর্ষণীয় ফলগুলো যখন পাকে তখন কোনো কোনো পাখির আহারও হয়ে ওঠে। এ সময় এ গাছে ফলখেকো পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায় গাছটিতে। কুমকুম ফল আবরণী প্রাকৃতিক রঙের আধার। এর থেকে তৈরি রং সিল্ক ও পশমি কাপড়কে রঙিন করতে ব্যবহার করা হয়।

তবে এর ফল থেকে রং তৈরির ব্যাপারটা প্রচার বা চাহিদা না থাকায় অব্যবহৃতই থেকে যায়। ফলে কুমকুম গোটা সৌন্দর্য বিতরণ, পাখিদের আহার আর ছোটদের খেলা কিংবা হিসাব/গণনা শেখার দারুণ উপকরণ হয়েই রয়।

এ গাছের বাঁকল ধুসর ও মসৃন। কদাচিৎ কোচকানো অথবা গিট সমৃদ্ধ। ছোট শাখাগুলো ধুসর বাদামী রঙের ও শেষের দিকে ছোট আশ যুক্ত। তবে পাতার উপরিভাগ সবুজ আশহীন হলেও পাতার নিচের অংশ বিবর্ণ ধুসর বর্ণের। তবে পাতাজুড়ে ছোট ছোট ফুটো দেখা যায় যা তের চিহ্ন বিদ্যমান। আর এর কাণ্ডের ভিতরে এক ধরনের পোকার আক্রমন দেখা যায়। সে তকে কোনো কোনো অঞ্চলে কিড়া খাওয়া বলে আর পোকাকে কিড়া পোকা বলে। এ গাছটি বৃষ্টিবহুল অঞ্চল, প্রখর খড়া থেকে দূরে নিরাপদ ও স্বাভাবিক অঞ্চলে তথা দণি এশিয়া, দণি পূর্ব এশিয়াসহ আফগানিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ায় দেখা মেলে। জানা যায় সিডনির দেিণ মাউণ্ট কেইরাতে এটি বনোটা নামে পরিচিত। স্থান বিশেষে ফুল আসার সময়ের ভিন্নতা দেখা যায়। আমাদের দেশে জুলাই থেকে অক্টোবরে ফুল ফুটলেও নিউসাউথওয়েলস এ জুন থেকে নভেম্বর, ফিলিপাইন এ মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। 

এ গাছের ভেষজ গুণ আছে। এর পাতা সীমিত রূপে গরু ছাগলকে খেতে দেখা যায়। এ গাছকে রা করা দরকার। এ গাছের ফল আবরণী দিয়ে যে রং তৈরি হয় সেদিকটাও খেয়াল রাখা দরকার। আমি এ গাছ সংরণ করার চেষ্টা করছি এক. ফলের সৌন্দর্যের জন্য, দুই. পাখিদের আহারের জন্য। এই মালোটাস ফিলিপেনসিস (Mallotus philippensis) স্পার্জ পরিবারের একটি উদ্ভিদ। লেখক ও সংগঠক। সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়